হাসিনার ফোনালাপ ফাঁস: আন্দোলনকালীন দিনগুলোর চাপ ও নির্দেশনা প্রকাশ

আলজাজিরার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন রূপ নেওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আতঙ্ক ও নেতৃত্বগত দ্বিধার চিত্র। প্রায় ৫০ মিনিটের এই প্রতিবেদনে তার দলীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে, যেখানে তিনি স্বীকার করেছেন, "দুই রাত ধরে ঘুমাতে পারিনি।"

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ছাত্রলীগ নেতা শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঙ্গে কথোপকথনে হাসিনা ক্যাম্পাস পরিস্থিতি জানতে চান। ইনান জানান, "শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে চলে গেছে, অনেক নেতা আতঙ্কিত।" উত্তরে হাসিনা বলেন, "দক্ষিণে (নেতাদের) বলেছি, যা প্রয়োজন তা করতে। তারা ভয় পায়।"

গত বছরের ১৮ জুলাই এনটিএমসি রেকর্ড করা আরেক ফোনালাপে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, "প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি... যেখানেই পাবে গুলি চালাবে।" ঢাকা দক্ষিণের মেয়র তাপসের সঙ্গে আলোচনায় হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের ইঙ্গিতও দেন তিনি। যদিও সরকারি বাহিনী এই দাবি অস্বীকার করে।

মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. শাবির শরীফ আলজাজিরাকে বলেন, "হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের অস্বাভাবিক ক্ষত নিয়ে বহু আহত আসে। এক্স-রেতে শরীরে গুলি আটকে থাকতে দেখা গেছে।"

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম দাবি করেন, হাসিনা জানতেন তার কথোপকথন রেকর্ড হচ্ছে। তিনি বলেন, "তিনি নিজেই নিজের জন্য ফাঁদ তৈরি করেছেন।"

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট হাসিনার পদত্যাগ ও ভারত পালানের আগে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত ও ২০ হাজারের বেশি আহত হন। ট্রাইবুনাল আগস্টে তার বিচার শুরু করতে যাচ্ছে, যেখানে এই ফোনালাপ প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হতে পারে।

এদিকে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতারা এখনও আত্মগোপনে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর একাংশের মধ্যেও তখন বিভক্তির চিত্র ফুটে উঠেছে আলজাজিরার তদন্তে।