এক শতাব্দী আগে এই দিনে মেঘনার জলে ভেসেছিল চা-শ্রমিকদের রক্ত। ১৯২১ সালের ২০ মে ব্রিটিশ সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ‘মুল্লুক চলো’ আন্দোলনে অংশ নেওয়া হাজারো শ্রমিক চাঁদপুর জাহাজ ঘাটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
তাদের রক্তে রঞ্জিত এ দিনটি আজও চা-শ্রমিকদের কাছে শহীদ দিবস, সংগ্রামের প্রতীক। কিন্তু দেশের ইতিহাসে এখনও এ দিবসের কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই।
বংশ পরম্পরায় বয়ে চলা বেদনা
শত বছর পরেও চা-শ্রমিকদের সন্তানরা বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই দিনটির শোক ও বঞ্চনার স্মৃতি। তাঁদের ভাষায়, এই আন্দোলনের ইতিহাস যেমন মুছে গেছে পাঠ্যপুস্তক থেকে, তেমনি তাদের অধিকারও মুছে গেছে রাষ্ট্রের মনোযোগ থেকে।
চা-বাগান এলাকায় এখনো শ্রমিকরা বঞ্চিত ন্যায্য মজুরি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা থেকে।
নির্মমতা ও প্রতারণার ইতিহাস
শ্রমিকদের অনেকে এসেছিলেন ওড়িশা, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। চাকরি ও আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের প্রলোভনে আনা হলেও এখানে এসে তারা বন্দী হয়ে পড়েন এক কঠিন বাস্তবতায়।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে চা বাগান তৈরি, বনজীবী প্রাণীর আক্রমণ, অমানুষিক পরিশ্রম ও ব্রিটিশ মালিকদের সহিংস দমননীতি—এই ছিল তাদের প্রতিদিনের জীবন।
চাঁদপুরে জড়ো হওয়া ৩০ হাজার শ্রমিকের ওপর চালানো হয় গণহত্যা। গোর্খা সৈন্যদের বেয়নেট ও গুলিতে নিহত হন হাজারো মানুষ। নদীর পানিতে ভেসে যায় বহু শিশুর নিথর দেহ।
সেই ঘটনার কোনও সঠিক সংখ্যা নেই ইতিহাসে, নেই শহীদদের নাম।
দাবি, শুধু একটি স্বীকৃতির
চা-শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন ২০ মে-কে ‘চা শ্রমিক দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বছরের পর বছর।
“রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলে এই আত্মত্যাগের ইতিহাস আগামী প্রজন্ম জানবে,” বলেন রামভজন কৈরি।
মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতে আজ দিনব্যাপী শোক র্যালি, আলোচনা সভা, ও শহীদ স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালনের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কণ্ঠে বারবার ফিরে এসেছে একটিই কথা—“আমাদের রক্তের দিনটিকে যেন সরকার ভুলে না যায়।”