প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ১৯:৩৬
দীর্ঘদিন পর লালমনিরহাটের পুরনো বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেওয়ায় কৌশলগত দিক থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। যদিও বাংলাদেশ সেনাসদর একে অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনের ভিত্তিতে নেওয়া একটি সিদ্ধান্ত বললেও প্রতিবেশী দেশটি মনে করছে এতে চীনের সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং এটি নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।
সোমবার সেনাসদরে মিলিটারি অপারেশন্স অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, বহু বছর বন্ধ থাকা লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি আবারও চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দেশের স্বার্থে। তবে তিনি স্পষ্ট জানান, এতে কোনো চীনা প্রতিষ্ঠান বা সামরিক সহযোগিতা রয়েছে কি না, সে বিষয়ে তাদের কাছে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই।
ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, এই বিমানবন্দর চালু হওয়ার পেছনে চীনের সহায়তা রয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এটি ভবিষ্যতে চীনা সামরিক অবকাঠামোর অংশ হতে পারে। কারণ, এটি ভারতের ‘চিকেন নেক’ এলাকার খুব কাছাকাছি অবস্থিত, যেটি ভারতের মূল ভূখণ্ড ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ করিডোর।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু হলে সেখানে চীনের যুদ্ধবিমান, রাডার এবং অন্যান্য সামরিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে ভারত ধারণা করছে। সেই উদ্বেগ থেকেই দেশটি পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ত্রিপুরার পুরনো কৈলাশহর বিমানঘাঁটি চালুর পরিকল্পনা করছে।
ভারতীয় প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে কৈলাশহর বিমানঘাঁটিতে গিয়েছে এবং তার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছে। তারা জানিয়েছে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এটিকে সামরিক ও বেসামরিক উভয় উদ্দেশ্যে উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও ইঙ্গিত রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন ভারতের বিশ্বস্ত মিত্র। তার পতনের পর গঠিত ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পক্ষপাতী, যা ভারতের জন্য অতিরিক্ত চাপের কারণ হতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে লালমনিরহাট বিমানবন্দরের পুনঃচালু হওয়া শুধু একটি অবকাঠামোগত প্রকল্প নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি নতুন উত্তেজনার সূচনা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান ও প্রতিবেশী দেশের উদ্বেগের মাঝে ভারসাম্য কীভাবে রক্ষা করা হয়।