মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে অযত্ন ও অবহেলায় ধ্বংসের পথে। লাখ লাখ টাকার বৃক্ষ চুরি, বছরের পর বছর বন্ধ প্রধান ফটক এবং অগ্রগতিহীন মামলা নিয়ে সংকটে পড়েছে এই জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ পার্ক।
শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই ইকোপার্কটি ১৯১৬ সালে লাউডগা রিজার্ভ ফরেস্ট নামে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষিত হয়। ২০০৬ সালে ৮৮৭ একর এলাকাকে ইকোপার্ক হিসেবে ঘোষণা করা হলেও আজও এটি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারেনি।
পার্কের প্রধান ফটকটি বছরের পর বছর ধরে তালাবদ্ধ থাকায় পাশের একটি ছোট গেট দিয়ে স্থানীয়রা যাতায়াত করেন। ভেতরে প্রবেশ করেই চোখে পড়ে অবহেলার চিত্র – কর্তব্যরত কর্মচারীরা থাকলেও তাদের অফিস বেশিরভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকে।
বনের গভীরে অবস্থিত দুটি কটেজ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দরজা-জানালা ভাঙা, কোনো আসবাবপত্র নেই, শুধু মরিচিকায় ঢাকা। স্থানীয়দের গরু-বাছুর এবং বন্য প্রাণীদের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে এই কটেজগুলো।
বর্ষিজোড়া ইকোপার্কে শাল, গর্জন, সেগুনসহ নানা প্রজাতির মূল্যবান গাছ এবং বানর, হনুমান, মায়া হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। কিন্তু বন বিভাগের তদারকির অভাবে প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে লাখ লাখ টাকার বৃক্ষ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, "এই পার্কে বন বিভাগের লোকজনকে দেখা যায় না। মাদকসেবীরা এখানে আড্ডা দেয়, বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ চালায়।" গাছ চুরির একাধিক মামলা দায়ের করা হলেও সেগুলো নিষ্পত্তি হতে আরও ৪-৫ বছর লাগবে বলে জানা গেছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেন, "পার্কের উন্নয়নে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রজেক্ট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।" তবে গাছ চুরির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, "এসব অভিযোগ সঠিক নয়।"
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, "এটি বন বিভাগের সম্পত্তি। তবে জেলা প্রশাসন পর্যটক সেবা উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ করছে।"
পরিবেশবিদরা হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, "এমন একটি সম্ভাবনাময় ইকোপার্কের এভাবে ধ্বংস হতে দেওয়া মানে আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে হত্যা করা।" তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
১৯ বছর পরও যখন বর্ষিজোড়া ইকোপার্কের উন্নয়ন আলোর মুখ দেখেনি, তখন প্রশ্ন জাগে – এই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কবে নেবে কার্যকর উদ্যোগ? স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পরিবেশপ্রেমী সকলেই এখন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এই গুরুত্বপূর্ণ ইকোসিস্টেম রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।