পরিবেশ পরিবর্তনের ধাক্কায় মৌলভীবাজার জেলায় বিলুপ্তির পথে পরিবেশবান্ধব তালগাছ আর তারই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা। একসময় গ্রামের মাঠঘাট, রাস্তার পাশে কিংবা পুকুরপাড়ে সারি সারি তালগাছ দেখা যেত। সেই তালগাছ এখন কেবল স্মৃতির অংশ হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি মৌলভীবাজারের সদর, রাজনগর, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, এক সময়কার নৈসর্গিক দৃশ্য এখন দুর্লভ। হাতে গোনা কয়েকটি তালগাছ এখনও গ্রামীণ ঐতিহ্য বহন করছে, আর সেই গাছে কিছু বাবুই পাখি তাদের শেষ বাসাগুলো তৈরি করে যাচ্ছে।
সদর উপজেলার গয়ঘর গ্রামে দেখা যায়, একটি পুকুরপাড়ের তালগাছে বাবুই পাখির কয়েকটি বাসা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, সকাল-বিকেল পাখিদের কিচিরমিচিরে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে, যা অনেক মানুষ দেখতে আসেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার রূপসপুর গ্রামের রাস্তাপাশের দুইটি তালগাছেও ঝুলছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। স্থানীয় মোজাহিদ আলী জানান, প্রতি বছর এই গাছে বাবুই পাখিরা বাসা তৈরি করে। তবে ফসলি জমি ও গাছ কেটে শিল্পকারখানা তৈরির কারণে এমন দৃশ্য কমে গেছে।
একই চিত্র কালাপুর ইউনিয়নের ভাগলপুর গ্রামেও। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, একসময় প্রচুর তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা দেখা যেতো। এখন গুটি কয়েক গাছেই দেখা যায় পাখিদের বাসা। ফলে প্রকৃতির এই সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে।
জেলার পরিবেশ সচেতন নাগরিকরা বলেন, ২০-২৫ বছর আগেও এমন বিপর্যয় ছিল না। কিন্তু আধুনিক নগরায়ণ, বন নিধন ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বাবুই পাখি এবং তালগাছ এখন বিলুপ্তির পথে।
জেলা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার বলেন, ব্যক্তিগত জমি ও বাড়ির আশেপাশে গাছ কেটে ফেলার ফলে বাবুই পাখির বাসার জায়গা কমে গেছে। পরিবেশ রক্ষায় তাল ও নারিকেল গাছ রোপণের পরামর্শ দেন তিনি।
পরিবেশবিদরা মনে করেন, তালগাছ সংরক্ষণ এবং বাবুই পাখির আবাসস্থল রক্ষা না করা হলে শিগগিরই এই পাখি এবং গাছ কেবল গল্পে সীমাবদ্ধ থাকবে। তাই এখনই সচেতন হওয়ার সময়।