মেঘালয়ে চোরাচালানের কয়লায় নিহত ১৬ শ্রমিক, রজব আলী সর্বশেষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৪:০০ অপরাহ্ন
মেঘালয়ে চোরাচালানের কয়লায় নিহত ১৬ শ্রমিক, রজব আলী সর্বশেষ

ভারতের মেঘালয়ে কয়লা চোরাচালানের কাজে বাংলাদেশি শ্রমিকরা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে প্রাণ হারাচ্ছেন। গত ৭-৮ মাসে মোট ১৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাকমা পশ্চিমপাড়ার রজব আলী নিহত হন মেঘালয়ের পাহাড়ি কোয়ারি ধসে। বুধবার বেলা ১২টার দিকে বিজিবি সিলেট সেক্টরের সীমান্ত এলাকার ওপারে এ ঘটনা ঘটে।  


রজব আলী, যিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাকমা পশ্চিমপাড়ার সমশের আলীর ছেলে, ভারতীয় সীমান্তে অবৈধভাবে কয়লা আনতে গিয়েছিলেন। ঘটনাটি তখন ঘটে যখন শ্রমিকরা কোয়ারিতে কয়লা উত্তোলন করছিলেন এবং কোয়ারি ধসে কয়েকজন আহত হন, তাদের মধ্যে রজব আলী নিহত হন।  


বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের নজর এড়িয়ে মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। নিহত রজব আলীর পরিবার ও স্থানীয় ইউপি সদস্যরা এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে নিহতের পরিবার জানিয়েছে যে, রজব আলী কয়লা চোরাচালানে না জড়িয়ে থাকলে এই ঘটনা ঘটত না।  


চোরাচালানে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ৭-৮ মাসে অন্তত ১৬ শ্রমিক মেঘালয়ের কোয়ারিতে কয়লা আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত শ্রমিকরা মূলত সীমান্ত এলাকার শ্রমিক, যারা চোরাচালানকারীদের অধীনে কাজ করেন।  


এছাড়া, স্থানীয় এলাকায় কয়লা চোরাচালানকারীরা ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। সীমান্ত এলাকায় আওয়াল মিয়া, হাবিবুর রহমান হাবি, শফিকুল ইসলাম ভৈরব্যা, নওমুসলিম দিপক এবং কয়েকজন নেতা এই চোরাচালান ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন।  


বুধবার রাতেই কয়লা চোরাচালান নিয়ে এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সীমান্তের ওপারে কয়লা নিয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে যে, বিজিবি’র নিয়মিত টহল দল কিছু সহায়তা করেছিল। তবে বিজিবি ও পুলিশের কিছু কর্মকর্তা চোরাচালানকারীদের সহায়ক হিসাবে কাজ করছেন, এমন অভিযোগ এলাকায় চলছে।  


এ ব্যাপারে একাধিক শ্রমিক জানিয়েছেন, কয়লা চোরাচালানের কাজে জড়িতরা এলাকায় সঠিক প্রভাব সৃষ্টি করেছেন। এসব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার কথাও তারা নিশ্চিত করেছেন।  


যদিও স্থানীয় পুলিশ এবং বিজিবি কর্মীরা পুলিশের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন, কিন্তু এলাকায় চোরাচালানকারী চক্রের বিরুদ্ধে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। নিহত রজব আলীর পরিবারও দাবি করছেন, যদি পুলিশ এই অবৈধ ব্যবসা রোধ করত তবে তাদের প্রিয়জনের মৃত্যু এড়ানো যেত।  


সীমান্তে চোরাচালান ও অবৈধ কয়লা ব্যবসা নিয়ে আলোচনা বেড়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, কয়লা চোরাচালান বন্ধ না হলে ভবিষ্যতেও এই ধরনের অঘটন ঘটতে থাকবে।