ঈদ উদযাপনের কিছু নীতিমালা আছে, যেগুলো অনুসরণ করলে ঈদের দিনটিও ইবাদতে পরিণত হয়।
ঈদুল আজহার কতিপয় সুন্নত : মিসওয়াক করা। গোসল করা। সাধ্যমতো উত্তম পোশাক পরিধান করা। সুগন্ধি ব্যবহার করা। কোরবানিদাতা কোনো কিছু না খেয়ে ঈদের নামাজে যাওয়া এবং নিজের কোরবানির গোশত প্রথমে খাওয়া। ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া। এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া অন্য রাস্তা দিয়ে আসা। ঈদগাহে যাওয়ার পথে উচ্চ স্বরে তাকবির (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) পড়া। ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা। কারো সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা। আনন্দ-অভিবাদন বিনিময় করা। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৬-৫৮)
ঈদের নামাজের বিধান : ঈদের নামাজ দুই রাকাত আর তা ওয়াজিব। এতে আজান-ইকামত নেই। যাদের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব, তাদের ওপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব। ঈদের নামাজ ময়দানে পড়া উত্তম। তবে মক্কাবাসীর জন্য মসজিদে হারামে উত্তম। শহরের মসজিদগুলোতেও ঈদের নামাজ জায়েজ আছে। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৫-৫৭)
সূর্যোদয়ের ২৫-৩০ মিনিট পর থেকে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত ঈদের নামাজের সময়।
ঈদের নামাজের নিয়ত : নিয়ত অর্থ মনের ইচ্ছা। কাজেই মুখে উচ্চারণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। মনে মনে নির্দিষ্ট করতে হবে যে আমি এ ঈদের নামাজ কিবলামুখী হয়ে এ ইমামের পেছনে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায় করছি।
অতিরিক্ত তাকবির : ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা ও ছানার পর তিন তাকবির। দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর রুকুতে যাওয়ার আগে তিন তাকবির। এ তাকবিরগুলো বলার সময় ইমাম-মুকতাদি সবাইকে হাত উঠাতে হবে। তৃতীয় তাকবির ছাড়া প্রত্যেক তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দিতে হবে।
কেউ যদি এ তাকবিরগুলো না পায়, তাহলে সে রুকুতে থাকা অবস্থায় আদায় করে নেবে। কারো পূর্ণ এক রাকাত ছুটে গেলে সে দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর তাকবিরগুলো আদায় করে নেবে। কিরাতের আগে আদায় করারও সুযোগ আছে। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৯, ৫৬০)
তবে ঈদের নামাজ ছুটে গেলে এর কোনো কাজা নেই।
কোরবানির দিনের সবচেয়ে প্রিয় আমল : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, কোরবানির দিন মানুষ যত আমল করে তন্মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে কোরবানি করা। কিয়ামতের দিন তা নিজের শিং, পশম ও খুরসহ হাজির হবে। কোরবানির পশুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে তা এক বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা আনন্দিত মনে কোরবানি করো। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৪৯৩)
কোরবানি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করতে হবে, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে করা যাবে না।
কোরবানি কখন ও কিভাবে করব : মোট তিন দিন কোরবানি করা যায়। ১০ জিলহজ ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। ১০ জিলহজ কোরবানি করা সবচেয়ে উত্তম। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/২৯৫) ১০ ও ১১
জিলহজ দিবাগত রাতেও কোরবানি করা জায়েজ। তবে দিনে কোরবানি করাই ভালো। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৪৯২৭)
কোরবানির পশু নিজে জবাই করা উত্তম। অন্যের দ্বারাও জবাই করানো যায়। অন্যের দ্বারা জবাই করালে এবং কোরবানিদাতা পুরুষ হলে—জবাইস্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করতে হবে। জবাইয়ের আগের ও পরের নির্দিষ্ট দোয়া পড়া মুস্তাহাব। শ্বাসনালি, খাদ্যনালি ও দুটি শাহরগের অন্তত একটি কেটে রক্ত প্রবাহিত করলেই জবাই শুদ্ধ হয়ে যাবে। যদি জবাইকারীর জবাই সম্পন্ন না হওয়ায়—কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে তাহলে তারও ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে। অন্যথায় কোরবানি সহিহ হবে না, জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৩৪)
পশুর বর্জ্য ইত্যাদি পরিষ্কার করা : পশুর বর্জ্য ইত্যাদি দ্বারা রাস্তা-ঘাট অপরিচ্ছন্ন করে রাখা উচিত নয়। এতে মানুষের কষ্ট হয়, যা বড় গুনাহ। তাই পশু জবাই করার পর রক্ত ও বর্জ্য ইত্যাদি নিজ উদ্যোগে পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দুটি অভিশপ্ত কাজ থেকে দূরে থাকবে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, অভিশপ্ত কাজ দুটি কী হে আল্লাহর রাসুল? জবাবে তিনি বলেন, মানুষের যাতায়াতের পথে অথবা (বিশ্রাম নেওয়ার) ছায়া বিশিষ্ট জায়গায় পেশাব পায়খানা করা। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫)
ঈদের দিন গান-বাজনা : ঈদ আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামত। নিয়ামতের চাহিদা হলো, এর শোকরিয়া আদায় করা। নিয়ামতদাতার নাফরমানি না করা। তাই ঈদের দিন পর্দাহীনভাবে চলাফেরা ও গান-বাজনাসহ যাবতীয় নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই গান-বাজনা অন্তরে কপটতা সৃষ্টি করে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯২৭)
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।