রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আরঅইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা মুমিন মুসসলমানের জন্য সুন্নাত। এ সুন্নাত পালন করা কী খুবই জরুরি? এর গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও আদব সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?
ইসলামি জীবন ব্যবস্থা মূলভিত্তির পুরো ভাগই কোরআন এবং সুন্নাহর উপর নির্ভরশীল। আল্লাহ তাআলা মানুষের কল্যাণে জীবন বিধান হিসেবে তাঁর মাধ্যমে গাইড স্বরূপ দান করেছেন কোরআন। এর ব্যাখ্যা হচ্ছে নবিজী সুন্নাহ। এ কারণেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত পালন ও গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা এভাবে ঘোষণা দিয়েছেন-
وَ مَاۤ اٰتٰىکُمُ الرَّسُوۡلُ فَخُذُوۡهُ وَ مَا نَهٰىکُمۡ عَنۡهُ فَانۡتَهُوۡا
‘আর রাসুল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।’ (সুরা হাশর : আয়াত ৭)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি যে ব্যাপারে তোমাদেরকে (বর্ণনা না দিয়ে) ছেড়ে দিয়েছি, সে ব্যাপারে তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও (অর্থাৎ সে ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করো না)। কারণ, তোমাদের আগের ব্যক্তিরা তাদের অধিক প্রশ্ন করার এবং তাদের নবিদের সঙ্গে মতভেদ করার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে। সুতরাং আমি যখন তোমাদেরকে কোনো জিনিস থেকে নিষেধ করব, তখন তোমরা তা থেকে দূরে থাক। আর যখন আমি তোমাদেরকে কোনো কাজের আদেশ দেব, তখন তোমরা তা সাধ্যমত পালন করবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
কোরআনুল কারিমের এ আয়াত ও প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, সুন্নাতের উপর আমল করা; সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা শুধু জরুরিই নয় বরং একান্ত আবশ্যক। কারণ কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াত ও প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে অনেক হাদিসে তা প্রমাণিত। তাহলো-
১. আল্লাহ বলেন- وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ
‘সে (নবিজী সা.) নিজ থেকে মনগড়া কোনো কথা বলেন না। (তিনি যা বলেন) তা তো ওহি; যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।’ (সুরা নাজম : আয়াত ৩-৪)
২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে, কিন্তু সে নয়; যে অস্বীকার করবে।’ জিজ্ঞাসা করা হলো- ‘হে আল্লাহর রাসুল! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করবে?’ তিনি বললেন, ‘যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে।’ (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)
৩. আল্লাহ বলেন- قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ
‘(হে রাসুল! আপনি) বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
৪. হজরত আবু নাজিহ আল-ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এমন এক মর্মস্পর্শী বক্তব্য শোনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হলো এবং চোখ দিয়ে পানি ঝড়লো। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি।
যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ!) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবুত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বেদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বেদআতই ভ্রষ্টতা।’ (আবু দাউদ, দারেমি, তিরমিজি)
৫. আল্লাহ বলেন- لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ
‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।’ (সরা আহজাব : আয়াত ২১)
৬. হজরত আবু মুসলিম মতান্তরে আবু ইয়াস সালামাহ ইবনু আমর ইবনু আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বাম হাতে খাবার খেলো। নবিজী (সা.) বললেন, ‘তুমি তোমার ডান হাতে খাও।’ সে বলল- ‘আমি পারব না।’ তখন তিনি বললেন- ‘তুমি যেন না পারো।’ একমাত্র অহংকার তাকে ডান হাতে খাওয়া থেকে বাধা দিয়েছিল। এরপর সে তার ডান হাত তার মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, দারেমি)
৭. আল্লাহ তাআলা আরও বলেন- مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَ
‘যে রাসুলের আনুগত্য করলো, সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করলো।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৮০)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের যথাযথ অনুসরণ ও অনুকরণ করা। কোরআন-হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী নবিজীর সুন্নাত মেনে জীবন গঠনে মনোযোগী হওয়া।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণে যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নাতের আলোকে গঠন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।