প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ১৩:৫০
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম, জাতীয়তা, নারী, প্রতিবেশী রাজনীতি, সমাজনীতি ও রাষ্ট্র কাঠামো নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেছেন। সোমবার (১৯ মে) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি দলটির দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করেন, যেখানে সাতটি বিষয়ে এনসিপির অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধ। এনসিপি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদার আদর্শকে ধারণ করে পথচলা শুরু করেছে। একইসঙ্গে বাংলার হিন্দু-মুসলমান-দলিতের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম এবং ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধী ঐতিহ্যকে ঐতিহাসিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে।
ধর্ম নিয়ে এনসিপির দৃষ্টিভঙ্গি বেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক। ইসলাম ও বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতিকে মূল্যায়নের পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি। ইসলামবিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা কিংবা ধর্মীয় চরমপন্থার বিপরীতে ধর্মীয় সহাবস্থান ও সম্প্রীতিকে গুরুত্ব দেয় এনসিপি।
জাতীয় পরিচয় নিয়ে এনসিপির দৃষ্টিভঙ্গি নাগরিক জাতীয়তাবাদের চেয়ে ভিন্ন। দলটি জাতি, ধর্ম বা গোত্রের ভিত্তিতে নয়, বরং বঙ্গীয় বদ্বীপের সভ্যতাগত বৈচিত্র্যকে জাতীয় পরিচয়ের মূলধারা হিসেবে তুলে ধরতে চায়। এর মধ্য দিয়েই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সংস্কৃতি নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছে তারা।
নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়নকে এনসিপি একটি প্রধান রাজনৈতিক নীতি হিসেবে দেখছে। নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, নেতৃত্ব এবং কর্মসংস্থানের জন্য দলটি সুস্পষ্ট নীতির কথা বলেছে। পাশাপাশি পারিবারিক আইনে নারীর সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্য ও হিন্দুত্ববাদ নিয়ে এনসিপির অবস্থান স্পষ্ট। দলটি মনে করে, এই প্রবণতা বাংলাদেশের জন্য একটি সাংস্কৃতিক ও ভূরাজনৈতিক হুমকি। সেই সঙ্গে তারা কৌশলগতভাবে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার পক্ষে, যেখানে ন্যায্যতা ও জাতীয় স্বার্থ থাকবে মূল বিবেচনায়।
দলটি একটি ইনসাফভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায়। এনসিপি শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, জলবায়ু, নগরনীতি, শ্রম অধিকার ও কর্মসংস্থানকে প্রধান নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরেছে। বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে নতুন অর্থনৈতিক জোন গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে দলটির।
সবশেষে, এনসিপি মনে করে দেশের বর্তমান ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। এটি শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি অপরিহার্য ধাপ বলেই বিবেচনা করছে তারা।