প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ১৭:৪২
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোপপাড়া ও সাদিকপুর গ্রামে ভৈরব নদীর দুই পাড় দখল করে বছরের পর বছর গড়ে উঠেছে এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের অবৈধ সাম্রাজ্য। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে নদীর ৫০ বিঘা জমি জবরদখল করে তাতে শস্যখেত ও স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। অথচ এসব দেখেও নিশ্চুপ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। অভিযোগ রয়েছে, নদী দখলের বৈধতা প্রমাণে শেখ মুজিবের ১২৩ ফুট উচ্চতার ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ছাত্রজনতা ভেঙে দেয়।
স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ শমসের ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা নদীর পাড় ঘেঁষে প্রাচীর নির্মাণ করে কৃষকদের পানি ব্যবহারে বাধা দিচ্ছে। স্থানীয় কৃষক সাজ্জাদ হোসেন জানান, নদীর পাড়ে এমনভাবে দেয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে যে, সাধারণ কৃষকরা পানিও তুলতে পারছেন না, মাছ ধরা তো দূরের কথা।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দখল হওয়া জমিতে নানা রকম ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে, তবে সেই জমিগুলো কারো ব্যক্তিগত নয়, বরং প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে। এমনকি গ্রামবাসীরা জানান, শেখ মুজিবের নামে কলেজ প্রতিষ্ঠা করে ও গ্রামের নাম বদলে দিয়ে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন রাশেদ শমসের। স্থানীয় ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের অভিযোগ, তার ব্যক্তিগত জমির নিচের নদীর জমি দখল করে ছাতা বসানো হয়েছে এবং প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে, যদিও এ নিয়ে আদালতের আদেশ থাকলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত শফিকুল শমসের জানান, ছাতা অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে এবং দখলের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। তবে প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে ব্যবস্থা নেওয়ার। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেদারুল ইসলাম বলেন, নদী দখলের সুযোগ নেই এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কুমার দাস জানান, দখলের তালিকা তৈরি করে দ্রুত উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এই ঘটনায় প্রশাসনিক নীরবতা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নদী রক্ষা ও কৃষকদের অধিকার নিশ্চিত করতে এলাকাবাসী এখন প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপের অপেক্ষায়।