ঢাকার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় সাংবাদিক পরিচয়ে একটি চিহ্নিত চক্রের সন্ত্রাসী ও অপপ্রচারমূলক কার্যকলাপে বিস্মিত স্থানীয় বাসিন্দা, বিশিষ্টজন, সাংবাদিক এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের কর্মীরা। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা পরিচয় গোপন করে বর্তমানে সাংবাদিকতার আড়ালে নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার প্রবণতা বাড়ছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানালেও আশুলিয়া থানা পুলিশের নিরব ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, আশুলিয়া থানা শ্রমিক লীগের প্রচার সম্পাদক নাজমুল হক ইমু, তার সহযোগী সাইকো সাব্বির, আওয়ামী লীগ নেতা সুমন আহমেদ ভূঁইয়ার ক্যাডার তিস্তা বাবু ও ভ্যালকা সোহেল ওরফে গুন্ডা রানা মিলে একটি সংঘবদ্ধ অপপ্রচারকারী চক্র গড়ে তুলেছে। এরা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সমাজের বিশিষ্টজন, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী এবং আন্দোলনরত ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয় ৯ ছাত্রনেতার উপর সাম্প্রতিক হামলার পর সেই হামলাকে ধামাচাপা দিতে এই চক্র সাংবাদিকের ছদ্মবেশে আহত ছাত্রনেতাদের ‘চাঁদাবাজ’ সাজিয়ে বিভিন্ন ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টাল ও ফেসবুক পেজে কুৎসিত সংবাদ ছড়াচ্ছে। সাংবাদিক পরিচয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও টার্গেট করছে। পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়ে পুলিশের কাজকেও বাধাগ্রস্ত করছে তারা।
এ চক্রের অন্যতম হোতা নাজমুল হক ইমুর নামে ৩টি হত্যা মামলা ও ৫টির বেশি জিডি রয়েছে বলে জানা গেছে। সাব্বির আহমেদের বিরুদ্ধে রয়েছে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগসহ অন্তত ১২টি জিডি। এত অভিযোগের পরও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না—এতে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র মুখ্য সংগঠক হৃদয় হাসান বলেন, “আমি নিজে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও বিচার পাইনি। আজ যারা সমাজে সত্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে, তাদেরকেই চক্রান্ত করে দোষী বানানো হচ্ছে।”
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবীর বলেন, “অপপ্রচার চালানো তথাকথিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ‘লেগুনা আপেল’ নামে এক অপপ্রচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেউই ছাড় পাবে না।”
স্থানীয় সাংবাদিক সোহাগ হাওলাদার জানান, “আমাকে ফেসবুকে মিথ্যা প্রচারণার শিকার করা হয়েছে, থানায় জিডি করেছি, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ পাইনি।”
এ অবস্থায় সচেতন মহল এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতারা আহ্বান জানিয়েছেন—অবিলম্বে এই সাংবাদিক সেজে ঘোরাফেরা করা অপপ্রচারকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে ভবিষ্যতে দেশের সাংবাদিকতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।