প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১১:১০
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করছে বলে মনে করছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া এবং বিভিন্ন পক্ষের নানান দাবি-মতবিরোধের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির পথে যাচ্ছে। বিএনপি শঙ্কা প্রকাশ করেছে, পরিস্থিতি যদি এমনই চলতে থাকে, তাহলে আগামী দিনে সরকার নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভেঙে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
গত কয়েক দিনে বিএনপি নেতারা বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। একই দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানববন্ধনে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ফ্যাসিবাদ শক্তিশালী হওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে সরকারকে সতর্ক করেন। দলটির আরেক নেত্রী শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর পুলিশের কঠোর আচরণের ঘটনাকে ষড়যন্ত্রমূলক বলছেন।
বিএনপি মনে করে, এই অস্থিতিশীলতার একমাত্র সমাধান হচ্ছে দ্রুত এবং সুনির্দিষ্ট নির্বাচন। দলটির নেতারা বলছেন, এখনো নির্বাচন নিয়ে পরিষ্কার রোডম্যাপ না দেয়ার ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যাচ্ছে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে সরকার যদি সময় নিয়ে চলতে থাকে, তাহলে বিএনপির অবস্থান পরিবর্তিত হতে পারে এবং তারা মাঠে কঠোর আন্দোলনের পথে যেতে পারে।
বিএনপি নেতারা স্পষ্ট করেছেন যে, তারা সরাসরি কোনো আন্দোলনে না গেলেও সরকারকে সহযোগিতা করছে। তবে আগামী কয়েক মাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তারা তাদের ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করবে। তারা সরকারের নির্বাচনী পরিকল্পনার প্রতি সংশয় প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, সরকারের গড়িমসির কারণে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের পর থেকেই রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন চলছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের এক নেতার ছুরিকাঘাত ও হত্যাকাণ্ড পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজিত করেছে। বিএনপি একটি রাজনৈতিক নেতা মন্তব্য করেছেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর সাধারণত এমন অস্থিতিশীলতা দেখা যায়, তবে বাংলাদেশে এর চেয়েও বেশি অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি মনে করছে, সরকারের উচিত অচিরেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা। তবে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতানৈক্য থাকায় একটি সম্মিলিত ঐক্যমত্য তৈরি করা কঠিন হচ্ছে। দলটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেসব সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে সেগুলোই আগে বাস্তবায়িত করা হোক।
গত ১০ মে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে। সেখানে নেতারা বলেছেন, সরকার নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছে এবং তাদের পরিকল্পনা স্পষ্ট নয়। কিছু নেতার মতে, সরকার হয়তো নির্বাচন দিতে পারবে না, যা দেশের জন্য বড় সংকটের সৃষ্টি করবে। বিএনপি স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতি চাই না, তবে যদি সরকার গড়িমসা অব্যাহত রাখে, তাহলে দল মাঠে কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হবে।
গত রোববার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের পেছনে সরকারের সিদ্ধান্তকে বিএনপি একটি রাজনৈতিক সংকেত হিসেবে দেখেছে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বিবৃতিতে দ্রুত নির্বাচন দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, জনগণ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত এবং এই লড়াই অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে, যা সরকারকে সচেতন হওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
বিএনপি মনে করছে, দেশের বর্তমান অবস্থা দ্রুত বদলানোর জন্য সরকারকে পরিষ্কার পথ দেখাতে হবে এবং একটি নির্ভরযোগ্য নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। তা না হলে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিপন্ন হবে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা অপরিহার্য বলে দলটির নেতারা মনে করেন।