মানুষ স্ট্যালিন কেমন ছিলেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক
আহমেদ ফজলুর রহমান মুরাদ,সিনিয়র লেখক ও কলামলিস্ট
প্রকাশিত: শনিবার ১৩ই জুলাই ২০১৯ ০৪:০১ অপরাহ্ন
মানুষ স্ট্যালিন কেমন ছিলেন?

বিখ্যাত সাহিত্যিকার ও বুদ্ধিজীবী এইচ জি ওয়েলস লিখেছেন- আমার ধারনা হয়েছিল, লোকে তাকে ভয় করে বলেই তিনি এতদিন শাসন ক্ষমতায় আছেন। কিন্তু তার সাথে কথা বলার পর বুঝলাম, তিনি এমন একজন মানুষ যার সম্পর্কে ভয়ের কোনও কারনই থাকতে পারে না। আর কেউ তাঁকে ভয় পায়না বলেই, তাঁর প্রতি সবার গভীর শ্রদ্ধা আছে বলেই, দেশের লোক তাঁকে নেতা হিসাবে মেনে নিয়েছে। আনা লুই স্ট্রং ও একই অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। ক্রুশ্চেভ যখন বললেন স্ট্যালিনের সামনে মুখ খোলা যেত না, ভারতবর্ষে বিশিষ্ট মার্কসবাদি এম এন রায় তখন জীবিত। উনি নিজেও স্ট্যালিন বিরোধী ছিলেন। কিন্তু তিনি ক্রুশ্চেভকে সমর্থন না করে বললেন- ক্রুশ্চেভের এই বক্তব্য সত্য নয়, আমি নিজে তার সঙ্গে তর্ক করেছি, দেখেছি খুব ধৈর্য্যের সাথে তিনি বক্তব্য শোনেন, যুক্তির মূল্য দেন। 

রেড আর্মির মার্শাল জুকভ লিখেছেন- যারা বলছেন স্ট্যালিন বিরোধিতা পছন্দ করতেন না, তারা মিথ্যেবাদী। যুদ্ধের সময়ে আমি তার সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করেছি, এমনকি যুদ্ধের সময়ে বহু বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে মত বিরোধ হয়েছে, আমি দেখেছি তিনি যুক্তির গুরুত্ব দেন। স্ট্যালিনের দেহরক্ষী আলেক্সী রিবিন, সামান্য একজন মানুষ। তিনিও বলেছেন আমরা স্ট্যালিনের সাথে তর্ক করতাম, তিনি ধৈর্য্য ধরে সব শুনতেন। শোনার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তার। কখনো কখনো বলতেন- তোমাদের কথা ভেবে দেখবো আমি। যারা বলেন স্ট্যালিন বিরোধিতা পছন্দ করতেন না, তারা ভুল বলছেন। 

স্ট্যালিন কিভাবে যৌথ সিদ্ধান্ত নিতেন সেই সম্পর্কে জুকভ লিখেছেন- স্ট্যালিন কোন পরিকল্পনা একা করতেন না। যুদ্ধের ফ্রন্টে যারা দায়িত্বে আছেন তাদের থেকে সাজেশন্স চাইতেন। নতুন কিছু বড় কিছু করার আগে ফ্রন্টের সাজেশন্স হেডকোয়ার্টারে, বিভিন্ন মিলিটারী ডিপার্টমেন্টে পাঠাতেন এবং তাদের পরামর্শ নিতেন,তারপরে কমান্ডারদের সাজেশন্স নিতেন। তারপরে পলিটব্যুরোতে বসতেন। পলিটব্যুরো ঠিক করার পরে আবার সেই সাজেশন্স পাঠাতেন ফ্রন্টে। যারা রণাঙ্গনে লড়ছে তাঁরা যখন ওই পরিকল্পনায় সায় দিতেন, তখন তা কার্যকর হোত। কিভাবে সকলকে ইনভলবড রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তার অসাধারন দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন আমাদের সামনে। 

জুকভ লিখেছেন স্ট্যালিন কথা বলতেন খুব কম,অন্যদের কথা বেশি শুনতেন মন দিয়ে। কিন্তু বাগাড়ম্বর একদম পছন্দ করতেন না। বাড়তি কথা একদম পছন্দ করতেন না। ভুলভাল রিপোর্ট দিলে ভীষন বিরক্ত হতেন। প্রত্যেকটি কথা মন দিয়ে শুনতেন, তারপরে বিশ্লেষন করে সিদ্ধান্তে আসতেন। স্ট্যালিন জবরদস্তি কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাঁর পদ্ধতি ছিল সিদ্ধান্ত সঠিক হলেও অন্যদের বুঝিয়ে তা করতে হবে,জোর করে নয়। ১৯৩০ সালে রাশিয়ার কৃষিক্ষেত্রে যখন কালেক্টিভ ফার্ম গড়ার ব্যাপক আন্দোলন চলছিল, তখন তিনি শুনতে পান কোথাও কোথাও দলের কর্মীরা ও সরকারি কর্মচারীরা কৃষকদের বাধ্য করছে। তখন মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি ছিল না কিন্তু জানার পরেই দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন স্ট্যালিন এবং দলীয় মুখপত্র প্রাভদায় এর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব