মৃত্যু কামনা নাকি সুস্থতার প্রতিক্ষা? (পর্ব ৩)

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৩১শে আগস্ট ২০২১ ১২:৩৩ অপরাহ্ন
মৃত্যু কামনা নাকি সুস্থতার প্রতিক্ষা? (পর্ব ৩)

রোহানের শাশুড়ির অবস্থা প্রতিমুহুর্তে খারাপ হচ্ছিল। কোমায় ছিলেন তাই পুরা শরীর অসার হয়ে গিয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ভাল ছিল। পরেরদিন মাঝরাতে তার অবস্থা দেখে ডিউটি ডাক্তার বললেন “I am not satisfied with this treatment. She needs ICU immediately' 



ডাক্তার যদি বলে চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট না তাহলে রোগীর পরিজনের কি অবস্থা হয়? রাত তখন ৩ টা বাজে। এ সময় একথা শুনে হাত পা পেটের মধ্যে সিদিয়ে গেল রোহানের। কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। আইসিইউ খালি নাই, চারিদিকে আইসিইউ’র হাহাকার চলছে। ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউ তো অনেক দুরের কথা। যত পরিচিত, স্বল্প পরিচিত শুভাকাঙ্খী আছে সবাইকে ফোন করা শুরু করল রোহান। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে কাজের সুবাদে সবাই আইসিইউ পেতে সাহায্য করার আশ্বাস দিলেও বেড খালি না হলে তো সম্ভব নয়। রোহান বুঝলেও তার স্ত্রী অবুঝের মত শুধু প্রশ্ন করেই যাচ্ছে, 'কখন আইসিইউ তে যাব?' রোহান নিশ্চুপ।



পরদিন সকাল ৯ টায় মাহিনের পরামর্শে দুরু দুরু বুকে আস্তে আস্তে হেটে আইসিইউর দিকে রওয়ানা হলো রোহান সিরিয়াল দিতে হবে তার। পা দুটো ভারী হয়ে গিয়েছে, চলছেই না যেন। বিপদে মানুষের পা নাকি ভারি হয়ে যায়। আইসিইউর ডিউটি ডাক্তার ডাঃ তৌফিক এর রুমের সামনে গিয়ে দাড়ালো সে। ডাক্তার খুব মনযোগ দিয়ে কিছু একটা লিখছেন। ১৫ মিনিট পর ডাক্তার রোহানকে দেখে ইশারা করে টেবিল থেকে ৬ ফিট দূরে রাখা একটা চেয়ার দেখিয়ে বসতে বললেন। পিপিই, ভাইজার (একধরনের প্লাস্টিকের শিল্ড) পরা ডাক্তার আর রোহানের মাঝখানে আরো একটা পলিথিনের পর্দা। ডাক্তারের কথা ঠিকভাবে শুনতে পাচ্ছিল না সে। এর মধ্যে একজন নার্স এসে ডাক্তারকে বলল, “৪ নম্বর বেডের রোগীর অবস্থা খুব খারাপ তারাতারি আসেন।” ডাক্তার সাহেব তাকে বসিয়ে রেখে দিলেন এক দৌড়। ছোট বেলায় কেয়ামত, হাশর, মিজানের কথা শুনাতেন হুজুর, মনে হচ্ছে সেটাই দেখতে পাচ্ছে রোহান। চারদিকে শুধু ইয়া নফসি! ইয়া নফসি! কে কোথায় বাড়ী, কি সমস্যা, কিভাবে হল? এগুলো কেউ কাউকে এখন আর জিজ্ঞাসা করে না। শুধু দৌড় আর দৌড় ডাক্তার,নার্স, ওষুধ এর পিছনে। (চলবে)

----- লেখকঃ আব্দুল হালিম, সহকারী পুলিশ কমিশনার, বাংলাদেশ পুলিশ।