বরিশালে সরকারিভাবে খাদ্য গুদামে বোরো মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন কৃষক। একইভাবে দাম বেশি হওয়ায় খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করেননি মিল মালিকরা ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ।তারা বলছেন, সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেশি থাকায় বাজারে ধান ও চালের দাম বেশি।ফলে কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পেয়েছে।এক্ষেত্রে সরকারের সফলতাই বেশি দাবী তাদের।
বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য গুদাম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিভাগের ৬ জেলায় ২১ হাজার ২২৪ মেঃটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৬ হাজার ৯৫ মেঃটন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।আর ৬ জেলার মধ্যে পটুয়াখালীতে সবচেয়ে বেশি ধান সংগৃহীত হয়েছে।এ জেলায় ৪শ’ ৬৬ মেঃটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩২৩ মেঃটন ধান সংগৃহীত হয়েছে। যার শতকরা হার ৬৯.৪৮। সবচেয়ে কম ধান সংগ্রহ হয়েছে বরিশাল জেলায়।এখানে লক্ষ্যামাত্রা অর্জনের হার শতকরা ১৯.০৬।
অপরদিকে বিভাগের ৬ জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার ৩শ ২৯ মেঃটন নির্ধারণ করা হলেও সংগ্রহ করা হয়েছে ১০ হাজার ৩শ ৭৬ মেঃটন চাল।ধান সংগ্রহে শেষ অবস্থানে থাকলেও চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ হয়েছে বরিশালে।এ জেলায় লক্ষ্যামাত্রার বিপরীতে চাল সংগ্রহের শতকরা হার ৯৩.০৯।আর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সবচেয়ে কম চাল সংগ্রহ হয়েছে ঝালকাঠিতে।এ জেলায় চাল সংগ্রহের শতকরা হার ৩৩.৯৪।
রায়পাশা কড়াপুর গ্রামের কৃষক শুক্কুর মুন্সী বলেন, এ বছর খোলা বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় সেখানেই ধান বিক্রি করেছেন তিনি।বাকেরগঞ্জের কলসকাঠী গ্রামের কৃষক কেরামত আলী বলেন, সরকার ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান কিনলেও ধান শুকানোসহ অনেক কাজ করতে হয়।গুদামে শুকনো ধান ব্যতীত গ্রহণ করা হয়না।তাছাড়া ধান দেয়ার পর টাকা উঠাতে গিয়েও নানা রকম ঝামেলা পোহাতে হয়।অপরদিকে আড়তদারদের নিকট ঝামেলা ছাড়াই মাঠ থেকে কাঁচা ধান কেটে নিয়ে বিক্রি করা যায়। তাই তিনিসহ গ্রামের অনেকেই খোলা বাজারে ধান বিক্রি করেছেন।প্রতি মণ ধান প্রকারভেদে সাড়ে ৯শ’ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ৫০ টাকা দরে ধান বিক্রি করেছেন বলেও জানান।এছাড়া আড়তদারদের কাছে দিলে নিকটবর্তী হওয়ার কারণে খরচও কম পড়ে বলেও জানান তারা।
বিভাগের বিভিন্ন জেলার মিল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ধানের ক্রয় মূল্য ১ হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।কিন্তু খোলা বাজারেও একই হারে ধান কেনাবেচা চলছে।বাজারে ধানের যে দাম তাতে চিকন ধান কিনে চাল করে গুদামে দেয়া সম্ভব নয় জানিয়ে তারা বলেন, মোটা ধান কিনেই চাল করে গুদামে দেওয়া সম্ভব।কিন্তু মোটা ধানের দাম বর্তমানে ৯০০ টাকা বা তার বেশি চলছে।তার ওপর ধান তেমন পাওয়াও যাচ্ছে না।তাছাড়া খোলা বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৪ টাকা কেজি দরে।কিন্তু সরকারিভাবে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ টাকা যা বর্তমান বাজার অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।ফলে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে। সেক্ষেত্রে চালের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তারা।
বরিশালের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ফারুক হোসেন জানান,এপ্রিল মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, অতিবৃষ্টিতে ধান শুকাতে না পারা এবং বৈশ্বিক মহামারী করোনায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় সীমিত থাকার কারণে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।আমন সংগ্রহের সময় সরকার প্রচুর ধান কেনার কারণে ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া সরকার অধিক পরিমানে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করায় বাজারে ধান-চালের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।বাজারে চাহিদা থাকায় কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পেয়েছে।এটা সরকারের সফলতা।কেননা যে উদ্দেশ্যে সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করে তা শতভাগ সফল হয়েছে এবার। সরকারের খাদ্য ঝুঁকিতে পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, গুদামে যে পরিমান নিরাপত্তা মজুদ থাকা দরকার তা আছে।