প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:৪৭
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের লাইন-৫ (মেট্রোরেল-৫ দক্ষিণ লাইন) অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে শুরু হচ্ছে না। সরকার ও প্রধান ঋণদাতা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বড় ব্যয়ের প্রকল্পটির জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমানোর প্রস্তাবও কোনো কাজে আসেনি। পুনর্গঠিত প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশন থেকে একনেকে তোলা হয়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান সরকারের মেয়াদে প্রকল্পটি আর বাস্তবায়িত হচ্ছে না। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারাও একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রকল্পটি গাবতলী থেকে আফতাবনগর হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত নির্মাণের কথা ছিল। ২০২২ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশার জন্য ইতিমধ্যে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রধান ঋণদাতা এডিবি ও কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে কাঠামো চুক্তি হয় চার বছর আগে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বড় বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত চেয়েছিলেন। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, মেট্রোরেল-৫ প্রকল্পের রুট সেবা সৃষ্টির দিক থেকে সুবিধাজনক নয়। একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য পূর্ববর্তী সরকারের সময় এটি নেওয়া হয়েছিল। নির্মাণ ব্যয়ও বেশি ধরা হয়েছে। কমিশন রুট ও ব্যয় যাচাই শেষে প্রকল্পটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ফেরত দেয়।
সড়ক বিভাগ পুনর্গঠিত ডিপিপি জমা দেয়, সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে, তবে রুট পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। মূল্যায়ন কমিটির সভার পর অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে পাঠানো হয়। কিন্তু সরকারের সায় না পাওয়ায় একনেকে প্রকল্প তোলা হয়নি।
মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৯ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা, বাকি ১৫ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ। তবে এডিবি আপাতত বড় ঋণ দিতে আগ্রহী নয়।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. হাদীউজ্জামান বলেন, মেট্রোরেল বড় বিনিয়োগ প্রকল্প। রুট পরিকল্পনা করা হলে কত যাত্রী সেবা পাবে তা যাচাই করা জরুরি। বাদ দেওয়া হলে জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে এবং ২০০ কোটি টাকা ব্যয় নষ্ট হবে।
প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব জানান, নগরবাসীর যোগাযোগ উন্নয়নের জন্য মেট্রোরেল-৫ দক্ষিণ লাইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব-পশ্চিমকেন্দ্রিক যোগাযোগে ভারসাম্য আনার লক্ষ্যেই রুট পরিকল্পনা করা হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী মেট্রোরেল ব্যবহারে বছরে ২১ কোটি ৪৯ লাখ ৭০ হাজার কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে, জ্বালানি সাশ্রয় হবে ৪১ দশমিক ২২ হাজার টন, এবং রাস্তায় এক হাজার ৪৯টি গাড়ির চলাচল কমবে।