প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২:৩০
জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সঙ্কটে সরকারী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত কালিয়াকৈরবাসী গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিচ্ছে মাত্র ৮ জন চিকিৎসক। জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সঙ্কটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এতে সরকারী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কালিয়াকৈর উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালে কালিয়াকৈর উপজেলার শ্রীফলতলী এলাকায় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট সরকারী হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। পরে ২০১২ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। তবে চাহিদা অনুযায়ী জনবল নিয়োগ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ না করায় কোনমতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি।
অপরদিকে ৩১ শয্যা হাসপাতালটির জন্য ২০ চিকিৎসক হাজির থাকার কথা থাকলেও চিকিৎসক আছেন মাত্র ৮ জন। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার কালিয়াকৈর বাজার, সহকারী সার্জন চাপাইর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ ৪ জন চিকিৎসকের পদই শূন্য রয়েছে। ৬ জন চিকিৎসক প্রেষণে আছেন। তারা হলেন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. সঞ্চিতা ভৌমিক, চাবাগান উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এমও ডা. গাজী মাহাবুব রহমান, এমও (ইউনানি) ডা. ইসরাত জাহান, সহকারী সার্জন ডা. তাসনুভা জাহান, সহকারী সার্জন ডা. শরিফুন নাহার, সহকারী সার্জন ডা. আ.ন.ম মাইনুল কুদ্দুস।
এছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট এ্যানেসঃ ডা. এম এম আব্দুল ওয়াদুদ ও এমও ডা. আবুল খায়ের সালাউদ্দিন ভুঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে বিনা অনুমতিতেই অনুপস্থিত আছেন। ওই দু'জনের নামে বিভাগীয় মামলা রয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৮ চিকিৎসক দিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে এ হাসপাতালের কার্যক্রম। এদের মধ্যেও ডেঅফ, ছুটি, ট্রেনিং, রাতে ও দুপুরের ডিউটি থাকেন। এতে অল্প চিকিৎসকের পক্ষে সাড়ে তিন লাখ জনঅধ্যূশিত এলাকায় এতো বেশি রোগী দেখা সম্ভব হয় না। এবিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নাজমুন নাহারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সময় মতো হাসপাতালে উপ¯িথত থাকি এবং আরএমও হিসেবে আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করি। করোনাকালীন সময় টিএস আক্রান্ত থাকায় হাসপাতালের সকল কাজ জীবনের ঝুকি নিয়েই আমি তা নিষ্ঠার সাথে পালন করেছি ,এখনো করছি।
সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হাসপাতালে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও কয়েকজন চিকিৎসক তা মানছেন না। ইচ্ছামতো তারা তাদের কর্মস্থলে যাতায়াত করছেন। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএসসহ কয়েকজন চিকিৎসক স্থানীয় কারখানা ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চেম্বার করেন।আর চেম্বার করতে ব্যবহার করছেন সরকারি গাড়ী। হাসপাতালে রুগি আসলেও তারা বিভিন্ন কৌশলে চেম্বারে রোগী পাঠিয়ে থাকেন।এছাড়া ওই হাসপাতালে এক্সরে মেশিনটি ২ বছরের বেশি সময় ধরে নষ্ট হয়ে আছে। তা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। এসব কারণে রোগীদের চিকিৎসা খরচ বেশি হওয়ায় তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তথ্যানুসন্ধানে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান, ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রবীর কুমার সরকারের অবহেলার কারনেই হাসপাতালের এমন নাজুক অবস্থা।
ডা: প্রবীর কুমারের বাড়ি হাসপাতাল থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দুরে হওয়ায় তিনি কয়েকজন চিকিৎসককে অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা দিয়ে নিজে যথেচ্ছ ভাবে চালাচ্ছেন হাসপাতাল। তিনি স্থানীয় লোক হওয়ায় তার অনিয়ম, দুর্নীতি, ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিকট থেকে কমিশন বানিজ্য দেখলেও কেউ কিছু বলে না। ডা: প্রবীর একজন নন ক্যাডার এডহক নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার হয়েও বিসিএস ক্যাডারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদ দখল করে আছেন কয়েক বছর ধরে। অথচ বোর্ডে তার নামের পাশে ভারপ্রাপ্ত ব্যবহার না করে মানুষকে ধোকা দিচ্ছেন।
হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে অনিয়ম, ভবন সংস্কার না করেই টাকা আত্মসাৎ, খাবার সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিয়োগে কমিশনের বিনিময়ে তার ঘনিষ্ঠজনকে দেয়া, হাসপাতালের গাড়ী নিজের চেম্বারের কাজে ব্যবহার , বাচ্চাদের স্কুলে আনা নেয়াসহ নানা অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে ডাঃ প্রবীর কুমারের বিরোদ্ধে। হাসপাতালের এম্বুলেন্সের ড্রাইভারকে নিজের গাড়ী চালনার জন্য ব্যবহার করেন, এতে জরুরী প্রয়োজনে এম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারন মানুষ। সরকারি কেয়ার্টার বরাদ্দের ক্ষেত্রেও অনিয়ম করছেন ডাঃ প্রবীর। তার নিজের নামে সরকারি কোর্য়াটার বরাদ্দ নেই, অথচ কোয়ার্টারে থাকতে দিচ্ছেন ডাঃ শাহানাজ পারভীন নামে এক ডাক্তাকে , যার পোষ্টিং টঙ্গীতে।
ডাঃ প্রবীর কুমার দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে হাসপাতালের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে, সেদিকে তার কোন নজর নেই। জরুরী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার সাধারন মানুষের সাথে অর্থের বিনিময়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে দুটি আলট্রাসাউন্ড ম্যাশিন থাকলেও তা ব্যবহার না করে রুগি পাঠান নিজস্ব চেম্বারে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রবীর কুমার সরকার নিজের দোষ অস্বীকার করে বলেন, ৫০ শয্যা হলেও ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতালটি। এরমধ্যে ৪টি পদ শূন্য, ৬ জন প্রেষণে, ২ জন অনুনোমদিত অনুপস্থিত রয়েছে। তাদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৮ চিকিৎসক দিয়ে ৫০ শয্যার হাসপাতাল চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।