প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২২:৪৫
ভোলার বোরহানউদ্দিনে কৃষি জমিতে পোকা দমনের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ‘আলোর ফাঁদ’। এ ফাঁদ জমিতে পাতানোর ফলে কৃষকেরা বুঝতে পারছেন- কোন জমিতে কী কীটনাশক দিতে হবে। এতে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ বাঁচে, অন্যদিকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশ। ফলে কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ‘আলোর ফাঁদ’ পদ্ধতি।বোরহানউদ্দিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, উপজেলায় ২৮ টি ব্লকের মধ্যে ২০ টিতে ‘আলোর ফাঁদ’ পাতানো হয়েছে। ২-৩ দিনের মধ্যে বাকি ৮ টিতেও ফাঁদ পাতানো হবে।
জমিতে ‘আলোর ফাঁদ’ ব্যবহার করায় ফসলে কী ধরনের কীটনাশক এবং কী পরিমাণ কীটনাশক দেওয়া দরকার তা কৃষকেরা বুঝতে পারছেন। সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা পাবে, অন্যদিকে কম কীটনাশক ব্যবহার করে ফসল ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকেরা। এমনকি অনেক উপকারী পোকামাকড়ও কীটনাশকের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। পাশাপাশি কিছু কিছু পেকা-মাকড় শনাক্ত হলে মাঠে শুধু গাছের ঢাল-পালা পুঁতে দিলেই পাখি ওই পোকা খেয়ে ফেলে। ফলে দিন দিন কৃষকরা এই কৃষিবান্ধব পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
কৃষকদের কথা বিবেচনা করে দেশের ৬ টি জেলায় কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কৃষি অফিসের উদ্যোগে উপজলার বিভিন্ন জমিতে বসানো হয়েছে ‘আলোর ফাঁদ’। এর ফলে ক্ষতিকর ও উপকারী পোকা চিহ্নিত করে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করার পর প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে ফসলে।উপজেলার বড়মানিকা ইউনিয়নের মানিকা গ্রামের কৃষক মো. আনোয়ার হোসেন,রেশাদ আলী, নিরব মোল্লা এবং কুতুবা ইউনিয়নের ছাগলা ও দক্ষিণ কুতুবা গ্রামের মো. হাবিব, প্রহল্লাদ মিত্র, সিডু, আবু তাহের মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ‘আলোর ফাঁদ’-এর কারণে আমরা আমাদের ফসলি জমিতে পোকার ধরন চিহ্নিত করতে পারছি, নির্দিষ্ট কীটনাশক প্রয়োগ করে পুরো খেতে পোকা আক্রমণ করার আগেই ফসলের পোকা দমন করতে পারছি। ফলে বাড়তি খরচের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি আমরা। তাঁরা দাবী করেন প্রতি মাঠে আলোর ফাঁদ বসালে কৃষকরা আরো লাভবান হবেন। সেই সঙ্গে কৃষি উৎপাদন বেড়ে যাবে।
বড়মানিকা ব্লকের উপ-সহকরী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন ও কুতুবা ব্লকের উপ-সহকারী কর্মকর্তা সৈয়দ ফাহিম জানান, জমির পাশেই একটি পাত্রে পানির মধ্যে কেরোসিন ঢেলে অথবা সাবানের ফেনা তৈরি করে তার এক ফুট ওপরে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। পোকা-মাকড় আলোর কাছে এসেই পানিতে পড়ে যায়, পরে তারা আর উঠতে পারে না। আমরা মরে যাওয়া বা পানিতে পড়া পোকা-মাকড় দেখেই বুঝতে পারি জমির এলাকায় কী ধরনের পোকা-মাকড় আক্রমণ করেছে। সে অনুযায়ী জমিতে কী ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে সে ব্যাপারে কৃষকেদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এতে কৃষকেরা একাধিক কীটনাশক ব্যবহার না করে নির্দিষ্ট জমিতে নির্দিষ্ট কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। ফলে ফসলের উৎপাদন খরচ যেমন কম পড়ছে, আবার অন্যদিকে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে কম।কৃষকদের আরো আলোক ফাঁদের দাবীর সাথে সহমত পোষন করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, চাহিদার বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।