নরসিংদীতে মনোহরদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রতিবন্ধী ভাতা বন্ধ রাখার এক চাঞ্চল্যকর সংবাদ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৩জুন) মনোহরদী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত ১৪/২/১৯ তারিখের উপজেলা চেয়ারম্যানের সত্তায়িত সিল সাক্ষর দিয়ে নির্দেশ দিয়ে থাকিলেও বার বার উপজেলা সমাজসেবা অফিসে জমা দিয়ে কোন কাজ হয়নি খিদিরপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র আঃকাদিরের স্ত্রী প্রতিবন্ধী রেজিনার খাতুনের। যাহার কার্ড নং-১৯৫৭৬৮১৫২৭৪৩১৮০২৬-০২। দেখা হয় সাংবাদিকের সাথে তিনি অভিযোক করে বলেন, বাবা আমি ৪ মেয়ের মা আমার বাড়ির জাগা ছাড়া আর কোন জায়গা নাই। আমি গরীব মানুষ ৪ মাস আগে উপজেলা চেয়ারম্যান বীরু সাবকে আমার সংসারের কথা বলিলে এবং আমাকে প্রতিবন্ধী দেখে এই কাগজে সিল সাক্ষর দিয়ে দেন। বীরু সাব বলেন তারাতারি এই কাগজ নিয়ে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে জমা দেয়ার জন্য। এরপর জমা দিতে গেলাম অফিসারা বলিল এখন ভাতার সময় নাই পরে আসেন। এরপর কতদিন আসলাম আমার ভাতা কার্ড পাইনা। খিদিরপুর নয়াপাড়া থেকে আজ আবার আসলাম আমার দেশী মুরগির ২ হালি ডিম ৮০ টাকা বিক্রি করে এই অফিসে। সারাদিন বসে রইলাম কোন খবর নাই। আমি গরীব তাই ভাতা কার্ড পাইনা। অফিসে টাকা দিলে ঠিকই কাজ হইত আমারতু টাকা নাই। তাই নিরাশ হয়ে চলে যাচ্ছি আর কত ঘোরাম। আমি ঈদেও ঠিক মতে করতে পারিনাই।ঈদের খরচ ছিলনা। আমার ঈদ করা অনেক কষ্ট হইছে।এলাকার মানুষ আমাকে বাড়িত এসে যা দেয় তাই দিয়ে স্বামী স্ত্রী দুজন খাই। আমার এলাকার জামিল চেয়ারম্যান ঈদে চাউল এবং ১০ টাকার চাউলসহ আমাকে কিছুই দেয়না।সরকারি সুযোগ সুবিধা কিছুই পাইনা। আমার খবরও নেয়না।
অভিযোগ রয়েছে একই ইউনিয়ন একই গ্রামের আমির উদ্দীনের পুত্র প্রতিবন্ধী মোঃ মজিবুর রহমান(৫৭)। প্রতিবন্ধী কার্ড থাকিলেও ভাতা নেই এই প্রতিবন্ধী মজিবুরের। জাহার কার্ড নং-১৯৬২৬৮১৫২৭৪৩১৮০২৭-০৪। একই গ্রামের প্রতিবন্ধী শিরিনা বেগম (৩৫) স্বামী নুরু উদ্দীন তিনিও নাকি পায়নি প্রতিবন্ধী ভাতা। এদিকে ৮নং শুকুন্দী ইউনিয়নে টাকা দিয়েও মিলেনি বয়স্কও বিধবা ভাতা। এই অভিযোগটি উঠেছে শুকুন্দী ইউনিয়ন ১-২ ও ৩ নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নীলুফা ইয়াসমীনের বিরুদ্ধে। গত ৮ এপ্রিল ভুক্তবোগী ২ নং ওয়ার্ড দক্ষীন নারান্দী গ্রামের মৃতঃরাজ্জাকের স্ত্রী হরমুজের নেছা(৭৬) বলেন,গত ঈদের সময় ফেতরার টাকা মানুষের কাছ থেকে উঠিয়ে আমি নীলুফা মেম্বারনীকে ১৫০০ টাকা দিয়েছি বয়স্ক ভাতার জন্য। কিন্তু বছর হয়ে গেলো এখনও আমার বয়স্ক ভাতার কার্ড পাইনি। আমি বলছি কার্ড না হলে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য কিন্তু খবর নাই।শুধু বলে কার্ড হবে। আর কত বয়স হলে পাব আমি বয়স্ক ভাতা। একই গ্রামের মৃত আঃমজিদ`র স্ত্রী ডিপটী বেগম (৬২) বলেন, আমার জায়গা নাই আমি ছেলে পেলে নিয়ে আমার শ্বাশুড়ির বাপের জায়গায় থাকি।আমার কাছ থেকেও গত ঈদের সময় নীলুফা মেম্বারনী ১৫০০ টাকা নিয়েছে বয়স্ক ভাতা দিবে বলে।এখন আর খবর নাই। পাব কি পাবনা জানিনা।
গত ৬ এপ্রিল ৩ নং ওয়ার্ডের উত্তর নারান্দী গ্রামের মৃত আফতাব উদ্দিনের মেয়ে রহিমা বেলন,আমার কাছ থেকেও ৩ হাজার টাকা নিয়েছে বয়স্ক ভাতা দিবে বলে। কিন্তু এখন বলে বয়স কম হবে না। আবার বলে বয়স ঠিক করে ভাতা দিতেছি। ভাতার জন্য কার্ড জমা দিয়ে রেখেছি। বয়স ঠিক করে দিমো। আবার বলে আরো ১ হাজার টাকা লাগবে নাকি। অভিযোগ রয়েছে চালাকচর ২ নং ওয়ার্ডের প্রতিবন্ধী সেতু(১৫) পিতা শান্তু মিয়া বলেন, কার্ড ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে সচিবের কাছে জমা দিয়েছিলাম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৫ দিন আগে। পরে ইউপি সচি বলে কার্ড নাই দেন নাই। থানায় জিডি করতে হবে ৩০০ টাকা লাগবে। এরপরে ৩০০ টাকা দিলাম।সচিব বলে আরো ১০০ টাকা লাগবে। ভাতার টাকা কম দেয়ারও অভিযোগ করেন।চালাকচর গ্রামের সমসের আলীর পুত্র বাসা বাড়িতে ভিক্ষাবৃত্তি করে বিক্ষোক আব্দুর রাজ্জাক বলেন,আমি বয়স্ক ভাতা পাই টাকা কম দেয়।এবং আমার স্ত্রী সাফিয়া প্রতিবন্ধী ভাতা পায় তারেও কম দেয় ভাতার টাকা ব্যাংক থেকে।বছর ছয় মাসে আমারে দেয় ব্যাংক থেকে ১৫০০ টাকা আমার বাড়ি উলিরে দেয় ২১০০ টাকা। শুকুন্দী নারান্দী প্রতিবন্ধী রিমনের নানীও টাকা কম দেয়ার কথা বলেন।টাকা কম পাওয়ার কথা উপজেলার আরো অনেকে বলেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানাজায়, আইডি কার্ড থাকার পরও নিবন্ধ করে বয়স্ক ভাতা, স্বামী থাকা অবস্থায় বিধবা ভাতা, স্বুস্থ্য মানুষ প্রতিবন্ধী ভাতা।গরীব মানুষ গুলো পাচ্ছে না ভাতা।
গত ১২ এপ্রিল মুঠোফোনে ভাতা কার্ডের জন্য টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শুকুন্দী ইউনিয়নের ১-২-৩ নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নীলুফা ইয়াসমীন টাকা নেয়ার কথা অসিকার করে বলেন, চর-নারান্দীর আমি কোন কার্ড ঐ দিছিনা। চর-নারান্দীর কোন লোক ঐ আমার এন কোন কাগজ পত্র অ দিছে না। আইছে অ না। উত্তর নারান্দী কার এনতে টাকা আনছি। এইতা মাইনষে কয় ঐ। মনোহরদী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ইমানুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন,ছিস্টেম আছেতু।উপজেলা চেয়ারম্যান আমার কাছে যেগুলো অনুমতিতে পাঠায়। এগুলো আমি জমা রাখি। আবার যখন ভাতা গুলো আসে। সারা বছরের কগজ গুলো নিয়ে আবার উপজেলা চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেই। যে স্যার আমাকে সারা বছর সই করে দিবেন। এই হচ্ছে আপনার কগজ। এখান থেকে আপনি কাকে দিবেন না দিবেন এটা হচ্ছে আপনার দায় দায়িত্ব আমার কোন দায়িত্ব না। ভাতা কার্ডের নাম করে টাকা আদায় বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এটা হচ্ছে আমার আওতার বাহিরে। আপনার বিডিও ফোঁটেছ দেখেছি। ভাতা টাকা দেয়ার বিষয়ে বলেন, ভাতা বইয়ে যে টাকা লেখা আছে ঐ টাকা যে কম দিতে পারেনা। ঐ টাকা তো সরকার দিয়েদেয় উদের নামে উদের একাউন্ড ঐ খানে কারোরই হাত দেয়ার খমতা নাই।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।