সরাইলে ঐতিহ্যবাহী 'লবর বা ফইরহা বান্নী' চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
মো: তাসলিম উদ্দিন, উপজেলা প্রতিনিধি সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশিত: শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২২ অপরাহ্ন
সরাইলে ঐতিহ্যবাহী 'লবর বা ফইরহা বান্নী' চলছে

সরাইল পরগনার শত বছরের চারদিন ব্যাপী ঐতিহ্যগত, ঐতিহ্যবাহী 'লবর বা ফইরহা বান্নী' নামে পরিচিত দেওয়ান বাড়ির সামনে দুদিন ও আলীনগর বটগাছ তলা দুদিন মেলা চলছে। গত শুক্রবার দেওয়ান বাড়ির সামনে দুদিন ব্যাপি  শুরু হয়ে রবিবারে শেষ হয়। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) শুরু হয়েছে দ্বিতীয় এ মেলা আলীনগর বটগাছ তলায় ফইরহা বান্নী বা লবর নামে। চলবে রবিবার পর্যন্ত। যুগ যুগ ধরে চলে আসা সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে বাঙালির প্রাণ। তারই ধারাবাহিকতায় শত বছর ধরে সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে "লবর বা ফইরহা বান্নী" মেলা। 

এ মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মেলায় দূর দূরান্ত থেকে জামাইয়েরা আসেন। মেলাকে সামনে রেখে ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য আয়োজন করা হয় নানা বিনোদন ব্যবস্থার। থাকে ছোট-বড় প্রচুর স্টল, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কসমেটিকস, খাবারের দোকান। ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় ব্যবসা করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন ব্যবসায়ীরা।বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) চারদিনে সরাইলসহ আশেপাশের অন্তত ৩০-৪০টি গ্রামের লাখো মানুষের সমাগম ঘটে এই মেলায়।শুক্রবার  সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানীরা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বসে আসে, অপরদিকে ক্রেতারা তা কিনছেন। এছাড়া মেলায় মিষ্টি জাতীয় দোকানের সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। মেলায় বিভিন্ন রকমের জিনিসপত্র উঠেছে। মেলায়  বিভিন্ন জেলাওউপজেলার লোকজনকে দেখা যায়। বড়দের পাশাপাশি ছোট ছেলে মেয়রা এই মেলা উপভোগ করছেন।

এ ব্যাপারে এস এম ফরিদ জানান,এই  ফইরহা বান্নী বা মেলার উৎপত্তি এক ইতিহাস রয়েছে। যুগ যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই এলাকার মানুষের কাছে ঈদ আর পূজাপার্বনের থেকেও এই মেলা বেশি উৎসবের। মেলাটি লবর বা  ফইরহা বান্নী হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি এ নামে পরিচিত। মেলাকে সামনে রেখে সরাইল ও এর আশপাশের বিবাহিত মেয়েরা তাদের বরকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর মেয়ের জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেওয়ার জন্য শ্বশুড়-শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি। মেলার দিন জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন শাশুড়িরা। আর সেই টাকার সাথে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলা থেকে চিড়া, মুড়ি, মিষ্টি, জিলাপিসহ বিভিন্ন জিনিস কিনেন।’

মেলায় কথা হল মো. সফু মিয়া নামের এক বৃদ্ধের সাথে।তিনি বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই আমি এ মেলা দেখে আসছি। এটি 'লবর বা ফইরহা বান্নী' মেলা হিসেবে অনেক পরিচিত। শ্বশুররা এ মেলা উপলেক্ষে জামাইদেরকে টাকা দেয়। আর জামাইয়রা কিছু টাকা যোগ করে মেলা থেকে বিভিন্ন কিছু কিনেন। আমরা একটি মেয়ে রয়েছে, তাকে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ের জামাইকে আমি দাওয়াত দেয়া হয়েছে। তিনি এখানে এসেছেন।’বাসুু  নামের এক মিষ্টি ব্যবসায়ী বলেন, এই মেলায় সবচেয়ে বেশি মিষ্টি বিক্রি হয়। তাই এখানে মিষ্টির দোকান অনেকগুলো রয়েছে। আমি ১০ বছর ধরে এই মেলায় মিষ্টি বিক্রি করছি।এ ব্যাপারে সমাজ সেবক রওশন আলী বলেন, ফইরহা বান্নীর একটি ইতিহাস আছে! তবে,আমাদের এ মেলায় প্রায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩ শতাধিক দোকান বসেছে। এই মেলা সরাইলের ঐতিহ্যবাহী ফইরহা মেলা। এই মেলায় শুরু হওয়ার আগেই গ্রামের জামাই এবং বউয়েরা আসেন। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন। এটি"লবর বা ফইরহা বান্নী"মেলা হিসেবে পরিচিত।এটি উপজেলার সবচেয়ে বড় মেলা 'লবর বা ফইরহা বান্নী ' বলে তিনি দাবি করেন।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব