প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:৩৫
থরে থরে সাজানো খেজুরের প্যাকেট। পড়ে আছে শত শত প্যাকেট কিসমিসও। দুম্বা আর মহিষের মাংস ঠিক কবে হিমাগারে রাখা হয়েছে তাও মনে নেই হিমাগার কর্তৃপক্ষের। প্যাকেট দেখে বোঝার উপায় নেই তার মেয়াদ কত আগে পেরিয়ে গেছে। তবে ঠিকই প্রমাণ-নথিপত্র দেখাতে বেশক্ষণ চলল নানা তোড়জোড়। তবে নথিপত্রে আর যাই থাক প্যাকেটের গায়ে মেয়াদ নেই অধিকাংশ খাদ্যপণ্যের। কোনোটার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৭ সালে। কোনোটার ২০১২ তে। আবার কোনো পণ্যের লেভেল অবৈধভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। নজরদারির আড়ালে সারা মাসই এসব মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য মজুত রেখে বিক্রি ও সরবরাহ চলছিল রাজধানীর দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানে।
সোমবার দুপুর ১২টা থেকে রাজধানীর ১৯২, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের শিকাজু ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, দেশি সুপার এগ্রো লিমিটেড ও ফার্ম অ্যান্ড ফার্মা হিমাগার এবং সেন্টমার্টিন ফিশারিজে অভিযান শুরু করে র্যাব-২। অভিযানকালে শিকাজু ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, দেশি সুপার এগ্রো ও ফার্ম অ্যান্ড ফার্মায় দেখা যায় এই চিত্র। মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি ও মজুত রাখায় এই তিন হিমাগারকে ৪৩ লাখ টাকা জরিমানা ও ১৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জব্দ করা হয় দুম্বা ও মহিষের মাংস মেয়াদোত্তীর্ণ ৮০০ মণ, ১২০০ মণ খেজুর ও ২০০ মণ কিসমিস।
অভিযানের ব্যাপারে র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘এখানে (তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল) তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে আমরা ৮০০ মন দুম্বা ও মহিষের মাংস জব্দ করেছি। ১২০০ মণের অধিক খেজুর ও ২০০ মণ কিসমিস জব্দ করেছি। এর বাইরে কোল্ড স্টরেজ থেকে বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ইকজেকশন, মাছ, সবজি ফলমূল জব্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৬ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য এখানে মজুত রাখা হয়েছিল। যা ঢাকা শহরের স্বপ্ন, মিনা বাজার, আড়ং, ডেইলি শপিংয়ের মতো সুপারশপসহ বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ ও বিক্রি করে আসছিল। আমরা যে ডকুমেন্ট পেয়েছি তাতে লক্ষ্য করা গেছে, পরশুদিনও এই প্রতিষ্ঠান থেকে অর্ধ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য বিক্রি ও সাপ্লাই করা হয়েছে। পাশাপাশি লক্ষণীয় যে, এখানে ২৬৮টি দেশি-বিদেশি নামিদামি ফোর স্টার, ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে-হোটেলে এসব মেয়াদোত্তীর্ণ মাংস, মাছ, ফলমূল, সবজি সরবরাহ করে আসছিল। এখানে অনেক বেবি ও ফুড আইটেম মিলেছে। এখানে মজুদ রাখা অধিকাংশ পণ্যই মেয়াদ নেই।
সারওয়ার আলম বলেন, আমরা যে অবস্থায় আজ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য হিমাগারে পেলাম তা বিক্রি, সরবরাহ ও মজুত রাখা খুবই দুঃখজনক। আরও বেশি হতাশার ও দুঃখের যে, আমরা জেনে না জেনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এসব কিনছি, রেস্টুরেন্টে খাচ্ছি। দুম্বার মাংস, মহিষের মাংস নামিদামি রেস্টুরেন্ট, সুপারশপসহ পথেঘাটেও বিক্রি করা হচ্ছে আমরা আর এটা হতে দিতে পারি না। আমরা খুবই কঠোরভাবে সুপারশপগুলো হিমাগার প্রতিষ্ঠানগুলো নজরদারিতে আনবো। র্যাব সূত্রে পাওয়া সর্বশেষ রাত পৌনে ১১টার খবর অনুযায়ী, দেশি এগ্রো, শিকাজু ও ফার্ম অ্যান্ড ফার্মা ছাড়াও সেন্টমার্টিন ফিশারিজ ও নিম ফুড প্রডাকস নামক প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা ও দণ্ড-জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্যারামাউন্ট কোল্ড স্টরেজে অভিযান চলছিল।
ইনিউজ ৭১/এম.আর