প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৬:৫১
বঙ্গোপসাগরে মাছের ঘাটতি ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অনুমোদনহীন দেশীয় কাঠের ট্রলিং বোট এবং নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার। এসব ট্রলিং বোটে নির্বিচারে মাছ শিকার করার ফলে নষ্ট হচ্ছে মাছের পোনা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এবং কমে যাচ্ছে মাছের উৎপাদন। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশ নেন শত শত জেলে।
রবিবার সকাল ১১টায় কুয়াকাটায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে কুয়াকাটা, আলীপুর, মহিপুর ও কলাপাড়া উপজেলার মৎস্যজীবীরা অংশগ্রহণ করেন। তারা দাবি জানান, দ্রুত অবৈধ ট্রলিং বোট নিষিদ্ধ করে সাগরের মাছ রক্ষা করতে হবে এবং মৎস্যজীবীদের জীবিকাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।
মানববন্ধনে জেলেরা অভিযোগ করেন, ট্রলিং বোট ব্যবসায়ীরা সংখ্যায় কম হলেও তাদের কারণে ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। হাজার হাজার বৈধ মাছ ধরার ট্রলারের ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে। তারা বলেন, সরকার যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ হারিয়ে যাবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ৪০ মিটারের কম গভীরতায় ট্রলিং বোট দিয়ে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। ট্রলিং বোট মালিকরা নির্বিঘ্নে গভীরতা বিবেচনা না করেই মাছ শিকার করে চলেছেন। এর ফলে সরকারের মাছ উৎপাদন পরিকল্পনা ব্যাহত হচ্ছে।
আশার আলো মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ বলেন, চিকন ফাঁসের নিষিদ্ধ জালে প্রতিনিয়ত ছোট মাছ ধরা পড়ছে। যার ফলে মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে মাছের পরিমাণ এতটাই কম যে অনেক জেলে লোকসান গুনছেন, অনেকেই ঋণের বোঝা নিয়ে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ কামরুল ইসলাম জানান, কিছু ট্রলিং বোট মালিক উচ্চ আদালত থেকে রীট আদেশ নিয়ে মাছ ধরছেন, তাই প্রশাসন আইনি প্রতিবন্ধকতায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত। তবে যেসব মালিকের বিরুদ্ধে রীট নেই, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
মৎস্য বিভাগের দাবি, তারা অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ জাল ও মাছ জব্দ করছে। কিন্তু স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন আইনগত সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ। এই সংকট নিরসনে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপই এখন জেলেদের একমাত্র আশা।