'অস্ত্র বানাই পুলিশের জন্য', দাবি কামরুলের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বুধবার ১৬ই জানুয়ারী ২০১৯ ০৯:১৫ অপরাহ্ন
'অস্ত্র বানাই পুলিশের জন্য', দাবি কামরুলের

কামরুল ইসলাম; বয়স পঞ্চাশের কোটায়। বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামে। নিজের বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন অস্ত্র তৈরির কারখানা। সেখানে নিজ হাতে তৈরি করেছেন অসংখ্য দেশীয় পিস্তল ও ওয়ান শ্যুটারগান। তবে আটক হওয়া কামরুলকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করলে তিনি দেন চাঞ্চল্যকর তথ্য। সাংবাদিকদের কামরুল দাবি করেন, পুলিশের অন্তত আধা ডজন কর্মকর্তার (উপ-পরিদর্শক) নির্দেশেই পিস্তল ও ওয়ান শ্যুটারগান তৈরি করতেন তিনি। প্রত্যেকটির জন্য তিনি মুজরি বাবদ পেতেন ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে তার তৈরি করা পিস্তল বাইরে কারো কাছে বিক্রি হয়নি।  বুধবার (১৬ জানুয়ারি) এই অস্ত্র কারখানার সন্ধান পাওয়ার পর তাকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় এসব কথা স্বীকার করেন কামরুল। আটক কামরুল দাবি করেন, যশোর কোতোয়ালি মডেল থানা, চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ি এবং বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের তৎকালীন ও বর্তমানে কর্মরত অন্তত আধা ডজন উপ পরিদর্শক আমাকে ভয়-ভীতি দেখান। তাদের ভয় ও চাপে পড়েই এ কাজ করেছি। তবে আমার বানানো পিস্তলে গুলি বের হয় না। এগুলো নাকি পুলিশের বিশেষ কাজে ব্যবহৃত হয়-এমনটাই ওই কর্মকর্তারা আমায় জানিয়েছেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যের নামও বলেন তিনি। কামরুলের এ কাজে এ কাজে সহযোগিতার দায়ে তার স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা ওরফে রানী (৩২) ছাড়াও ওই বাড়িতে অবস্থানকারী একই গ্রামের নূর হোসেনের ছেলে আবুল বাশারকেও (৩২) আটক করা হয়েছে। কামরুল ইসলামের স্ত্রী আটক রাবেয়া সুলতানা সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামী কামরুল অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে মাছের পোনা উৎপাদন করে তা বিক্রি করেন। তাদের পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া এক মেয়ে ও একাদশ শ্রেণী পড়ুয়া এক ছেলে রয়েছে।  তিনি বলেন, আমার স্বামী আগে কোনো অপরাধে যুক্ত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। তবে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে। সেই সূত্রেই অনেকে আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন। 

আমি ভয় পেয়ে এসব বিষয়ে স্বামীকে বাঁধা দিলেও তিনি (স্বামী কামরুল) উল্টো বলতেন, কোনো সমস্যা হবে না, স্যারেরা দেখবেন! তবে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে আমাদের পুরো পরিবারটি ছারখার হয়ে যাচ্ছে। এ সময় পাশের একটি কক্ষে তার পাশে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে ঢুকতে দেখে রাবেয়ার স্বামী কামরুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘উনারা কারা ? দেখলে (স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে) এখন তাদের কোনো খোঁজ নেই! একবার আসলোও না!’ তবে যোগাযোগ করা হলে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিন এই দাবি নাকচ করে দেে তিনি বলেন, ‘কামরুল ধরা পড়ে আবোল-তাবোল বলে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে আমরা ধারণা করছি।’ এর আগে সকালে যশোরে দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মাদক ও চোরাচালান বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়।  এ সময় ওই কারখানাটির সন্ধান পাওয়া যায়।  অভিযানে নিজ বাড়ির ওই কারখানায় একটি বিদেশি পিস্তলের আদলে ‘দেশীয় পিস্তল’ তৈরি করার সময় কামরুলকে হাতেনাতে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের পেশকার জালাল উদ্দিন জানান, অভিযানে পিস্তল তৈরির কাজে ব্যবহৃত ‘পিস্তলের ডাইস, লোহার পাত, লোহার নল, বিভিন্ন ধরনের লোহা কার্টার, লোহা ঘষার যন্ত্রসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ জব্দ করা হয়। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে তৈরি হওয়া একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, টেস্ট ফায়ারে ব্যবহৃত হওয়া কয়েকটি গুলি, দুইটি ম্যাগজিন ও একটি পিস্তলের ড্রামও পাওয়া  গেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জামশেদুল আলম ও হাফিজুল হক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বদরুল হাসান এবং পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব