অপারেশন ডেভিল হান্টে আরও ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: সোমবার ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:০৫ অপরাহ্ন
অপারেশন ডেভিল হান্টে আরও ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য অভিযানের সঙ্গে এ সংখ্যা যুক্ত হয়ে মোট গ্রেপ্তার এক হাজার ৫০৩ জনে পৌঁছেছে। সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিশেষ এই অভিযানে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে পিস্তল, দেশীয় শুটার গান, চাপাতি, রামদা, ছোরা, স্টিলের ব্যাটন ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র।  


অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয় গাজীপুরে সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার ঘটনার পর। ৭ ফেব্রুয়ারির ওই রাতে ধীরাশ্রম এলাকায় তার বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে, যা কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। অভিযোগ রয়েছে, হামলার সময় শিক্ষার্থীদের একাংশ বাধা দিতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে এবং এতে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা জানান, তারা হামলা ও লুটপাটের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়।  


এ ঘটনায় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে সারা দেশে অভিযান শুরু করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে যৌথ বাহিনী কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে টানা অভিযানে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের দাবি, অভিযানের ফলে বিভিন্ন অপরাধী চক্রের তৎপরতা কমে এসেছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তারা কাজ করে যাচ্ছে।  


অভিযানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পুলিশের বরাত দিয়ে জানা যায়, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একটি পিস্তল, দেশীয় তৈরি শুটার গান, গুলির খোসা, তাজা কার্তুজ, চাপাতি, রামদা, ছোরা, স্টিলের ব্যাটন ও একটি খেলনা পিস্তল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এসব অস্ত্র অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।  


অভিযানের ফলে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও অপরাধী চক্রের কার্যক্রম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। তারা বলছে, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে যেসব এলাকায় অপরাধের মাত্রা বেশি, সেসব এলাকাকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। অভিযানের ফলে অপরাধীদের আতঙ্ক বেড়েছে এবং তারা আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।  


সাধারণ মানুষের মধ্যে এ অভিযানের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে এটি কার্যকর উদ্যোগ, আবার কেউ বলছেন, নিরপরাধ ব্যক্তিরা ভুক্তভোগী হতে পারেন। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিতে অনেকে আহ্বান জানিয়েছেন।  


আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযানে আরও নতুন তথ্য পাওয়া গেলে তা বিবেচনায় রেখে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে। তারা সাধারণ জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে যেকোনো সন্দেহজনক ঘটনা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর আহ্বান জানিয়েছে।  


অপারেশন ডেভিল হান্ট কতদিন চলবে, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি। তবে অপরাধ দমনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে অপরাধ প্রবণতা কমবে এবং সাধারণ মানুষ নিরাপদ থাকবে।