দেশের অর্থনীতিতে গভীর সংকট তৈরি হয়েছে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলছে রাজস্ব আহরণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৫৩ হাজার কোটি টাকার কাটছাঁট করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির হতাশাজনক চিত্রকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে সরকার কৃচ্ছসাধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কো-অর্ডিন্যান্স কাউন্সিল বৈঠকে সরকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ অর্থনীতির বিভিন্ন দিকের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমানোর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়া এবং বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী অর্থনৈতিক সংকট।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়ার প্রভাব সরাসরি সরকারের ব্যয়ে পড়ছে। এর ফলস্বরূপ, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে সরকারের উন্নয়ন বাজেট ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানে কমিয়ে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে, ৩০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, উন্নয়ন প্রকল্পগুলির ব্যয় গত ১৪ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এছাড়া, রাজস্ব আহরণে হ্রাসের কারণে এনবিআর কর আদায় লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার থেকে কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামানো হয়েছে। সরকারের এই কাটছাঁটের সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দেশব্যাপী অস্থিরতা চলাকালীন সময়ে রাজস্ব আদায়ে ব্যাঘাত ঘটেছে।
সরকারের আর্থিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদেশি ঋণ এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ দেশে আয় কমছে এবং ব্যয় বেড়েই চলেছে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য ভর্তুকি বা কৃষি খাতে সরকারের ব্যয় কমানো হবে না, তবে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছসাধন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে সরকারের জন্য পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে উঠছে। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, বিদ্যুৎ, পেট্রোল, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি খাতে বরাদ্দের ২০ শতাংশ স্থগিত থাকবে, এবং নতুন স্থাপনা নির্মাণও বন্ধ রাখা হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, রাজস্ব আহরণ ও ব্যয়ের ঘাটতির কারণে দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় আরও কঠিন সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হতে পারে।