সীমান্তে নিহত সবাই মাদক-মানব-গরু চোরাকারবারী : বিএসএফ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২১শে জুলাই ২০২২ ০৭:৫৭ অপরাহ্ন
সীমান্তে নিহত সবাই মাদক-মানব-গরু চোরাকারবারী : বিএসএফ

সীমান্ত ইস্যু এলেই সবার আগে উঠে আসে হত্যা। এসব হত্যার বেশির ভাগই ঘটে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের গুলিতে। আর প্রাণ হারায় বাংলাদেশিরা। বরাবরের মতো এবারও এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন বিএসফের মহাপরিচালক (ডিজি) পঙ্কজ কুমার সিং। পাঁচ দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলনেও এ বিষয়টি এড়ায়নি।


তবে হত্যা প্রসঙ্গে ভিন্ন উত্তর দিলেন পঙ্কজ কুমার সিং। এসব ঘটনার জন্য দুষলেন নিহত ব্যক্তিদের। সাফ জানিয়ে দিলেন, সীমান্তে যারা বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন, তারা মাদক-মানব-গরু চোরাকারবারসহ নানান অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আর অপরাধীরা রাতের আঁধারে সীমান্ত এলাকায় অপরাধকর্ম করে থাকে। আর ওই সময় তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে কিছু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।


দায় বাংলাদেশিদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে উল্টো প্রশ্নবানে জর্জরিত হন বিএসএফের ডিজি পঙ্কজ কুমার সিং।


তাকে প্রশ্ন করা হয়, সীমান্তে হত্যার শিকার হওয়া লোকজনকে কীসের ভিত্তিতে অপরাধী বলা হচ্ছে এবং তাদের শরীরের ওপরের অংশে গুলি লাগার পরও কেন এগুলো টার্গেটেড কিলিং নয়।


নড়েচড়ে উঠেন তিনি। জবাবে বলেন, জুডিশিয়াল সিস্টেমে বা কোনো অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তো আমরা কাউকে অপরাধী বলতে পারি না। আমরা বর্ডার বাহিনীর সঙ্গে কথা বলি, কলকাতা পুলিশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করি। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, সীমান্তে দুই দেশের অপরাধী ও চোরাকারবারিরা নিয়মিত যাতায়াত করে। আমাদের উভয় দেশের সীমান্তবর্তী দুই এলাকায়ই খারাপ মানুষ আছেন। তাদের কারণে সীমান্তে অপরাধ সংঘটিত হয়, চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশের মতো ঘটনা ঘটে। গরু পাচার, শিশু ও নারী পাচারের ক্ষেত্রে অপরাধীরা সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে।


বিএসএফের সাফাই গেয়ে ডিজি আরও বলেন, আমরা প্রথমে নন-লেথাল উইপন (প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র) ব্যবহার করি, যাতে প্রতিরোধ প্রাণঘাতী না হয়। এ সময় নিজের বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত অপরাধীদের হামলায় সীমান্তে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন ৮৯ বিএসএফ সদস্য।


বিএসএফের মহাপরিচালক (ডিজি) পঙ্কজ কুমার সিং বলেন, বিজিবির সঙ্গে সম্পর্ক এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। আমরা যৌথভাবে সীমান্তকেন্দ্রিক অপরাধ দমন, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় আনতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করে থাকি কীভাবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা যায়। মিনিস্ট্রি, বিজিবি ডিজি থেকে বিজিবির সব পর্যায়ে আমরা কথা বলেছি।


এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ সীমান্ত হত্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানান।


তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত ৫১ পরিবারের ২১২ জন রোহিঙ্গা ভারত সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এমন অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভারতকে অনুরোধ করেন তিনি।


পিলখানায় বিজিবি সদরদপ্তরে পাঁচ দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তারা।


সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। অন্যদিকে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সার্ভেয়ার জেনারেল অফ বাংলাদেশ এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।