একটা সময়ে সেক্স টয় বা যৌন খেলনা ছিল একধরনের অপ্রচলিত ডাক যোগে অর্ডার করা পণ্যের তালিকায়- আর সাম্প্রতিক সময়ে এটি বাজারজাত হয় স্বামী-স্ত্রী'র সম্পর্ক উন্নয়নের মজার এক মাধ্যম হিসেবে।
আর এই প্রক্রিয়ার মাঝ দিয়েই এটি পুরো বিশ্বে বিলিয়ন ডলারের বাজারের পরিণত হয়েছে।
আপনি এই তথ্যে লজ্জা পেতে পারেন, আপনার একটু হাসিও পেতে পারে, কিন্তু এটি সত্যি যে সেক্স টয় একটি বিরাট বিশাল বাণিজ্য পণ্য।
সুতরাং সততার সাথে জবাব দিন এবার: আপনার নিজের কি একটি সেক্স টয় বা যৌন খেলনা আছে?
যদি থেকে থাকে তা কি আপনি বন্ধুদের কাছে স্বীকার করবেন?
এই দুটি প্রশ্নের 'হ্যাঁ' জবাবটাই ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়ছে।
একটা সময় গোপনে এটি ডাক যোগে অর্ডার করা হতো বা কেনা হতো- আর এগুলোর বিজ্ঞাপন ছাপানো হতো কোনো পর্ণ ম্যাগাজিনের পেছনের পাতায়।
কিন্তু এখন এটি সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক ভালো করার মজার একটা উপায় হিসেবেই বিক্রি হয়ে থাকে।
এখন এগুলো আর বিব্রতকর কোনো কিছু নয়, সেক্স টয় এখন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়ে দাড়িয়েছে, আর বিশ্বজুড়ে ভীষণভাবে বেড়েছে এর বিক্রি।
সেক্স টয়'এর বিশাল বাণিজ্য আর বাজার সম্পর্কে কিছু অপ্রচলিত তথ্য জানার:
১. বিশ্বজুড়ে এর বিক্রির অঙ্কটা বিলিয়ন পাউন্ড
সেক্স টয়ের ব্যবসা এখন আর গোপনীয় কিছু নয়
২০১৭ সালে দুনিয়া জুড়ে সেক্স টয় বিক্রি হয়েছে ১৮ বিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ডেরও বেশি অঙ্কের অর্থের।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, এই সংখ্যাটি ইলেকট্রিক টুথব্রাশের ১০ গুণ এবং গত বছরে সারা বিশ্বে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সর্বমোট বিক্রির চেয়েও কিছু বেশি।
২. সেক্স টয়-এর দ্রুততম ক্রমবর্ধমান বাজার এখন ভারত আর চীন
যৌনতার ক্ষেত্রে নতুন নতুন বিষয় চেষ্টা করতে আগ্রহী হচ্ছে মানুষ
ব্যাঙ্গালুরুর একটি বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেকনাভিও'র বিশ্লেষক যশুয়ার মতে, "এটি সবচেয়ে দ্রুত বাজার করে নিচ্ছে ভারত এবং চীনে।"
যদিও ভারতের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে সেক্স টয় জনসম্মুখে বিক্রি করা যাচ্ছে না বা এর দোকান দিতে পারছেন না, তবুও ই-কমার্স বা ইন্টারনেটের বিস্তার এগুলো কেনা এখানে সহজ করে দিয়েছে - এমনটাই মত মি. যশুয়ার।
৩. মার্কিনিদের চাইতেও বড় ক্রেতা ইউরোপিয়ানরা
সেক্স টয়-এর ক্ষেত্রে ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে ইউরোপীয়রা মার্কিনিদের থেকে এগিয়ে এমন পরিসংখ্যান টেকনোভিও'র।
মি. যশুয়া বলছেন, "কিছু জরিপে দেখা যাচ্ছে যে ইতালির অন্তত ৭০% নারী পুরুষ এই যৌন খেলনা ব্যবহার করছে।"
৪. এমনটি নয় যে কেবল নারীরাই এটি ব্যবহার করছেন
বাজার বিশ্লেষক যশুয়ার মতে, কেবল নারীরাই এটি ব্যবহার করে থাকেন- বাস্তবতা তা নয়।
তার মতে উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা ৫০ভাগ পুরুষ কখনো কখনো সেক্স টয় বা যৌন খেলনা ব্যবহার করছে।
যদিও মি. যশুয়া মানছেন যে, নারীদের বিবেচনায় আনলে তার পরিমাণ বেড়ে যায়, "অন্তত এটি ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ নারীদের ক্ষেত্রে।"
৫. এই বাণিজ্য প্রসারে বড় ভূমিকা রেখেছে নারীর ক্ষমতায়ন
১৯৭৬ এর সেক্স টয় কোম্পানি ডক জনসন-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রন, তার সন্তান এরিক ব্রাভারম্যান বলেন, "সেক্স টয় সম্পর্কে কল্পনা এবং ধারনার পুরোপুরি পরিবর্তন হয়েছে।"
এর বেচা-কেনা দুটোইতেই সবচেয়ে এগিয়ে মেয়েরা।
গেল শতকের ৯০'এর দশকের অন্যতম জনপ্রিয় টিভি শো 'সেক্স এন্ড দ্য সিটি'তে প্রচারিত চারজন মূল চরিত্র যখন নিজেদের মধ্যে 'ভাইব্রেটর' নিয়ে আলোচনা করছিল- মিজ এরিকের মতে, সেটি ছিল পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্যে 'বিশাল মুহুর্ত।'
এ নিয়ে তার ভাষ্য হলো, "নারীবাদ এখানে বড় ভূমিকা রেখেছে। আমি মনে করি নারীর ক্ষমতায়নের ফলেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই শিল্পের বাজার এগিয়ে গেছে।"
৬. এর সম্প্রসারণে বড় ভূমিকা রয়েছে অনলাইনে বিক্রি
২০০৩ সালে ব্যবসা শুরুর পর ই-কমার্স ভিত্তিক সেক্স টয় এর খুচরা বিক্রির প্রতিষ্ঠান 'লাভহানি'র বিক্রি ছাড়িয়ে গেছে এক লাখ পাউন্ড- যা কিনা প্রতিবছরে ৩৫% হারে বেড়েছে।
প্রতিষ্ঠার ১৬বছর পর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার পরিধি বেড়েছে ১৩০গুণ।
এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড লংহার্স্ট বললেন, "সাধারণ একটি পণ্যের মতো করেই অনলাইনে এটি বিক্রি হয় সাধারন বাদামি খামে, বাদামি বাক্সে ভরে। ফলে কোনো অস্বস্তি থাকে না এটি নিয়ে, দোকানে গিয়ে দোকানির সাথে কথা বলতেও নয়।"
৭. সেক্স টয়-এর বাজারের বড় একটি অংশ দম্পতিদের দখলে
রিচার্ড লংহার্স্টের মতে, ঐতিহাসিকভাবে মতে করা হয় যে ব্যক্তি প্রেম এবং যৌন জীবনে ব্যর্থ- তারাই হয়তো এটির ব্যবহার করে থাকেন।
"কিন্তু আসল বিষয় হলো সেক্স টয় ব্যবহারকারী বেশিরভাগই হলো স্বামী-স্ত্রী বা যুগল। আর এর ব্যবহারে তাদের যৌন জীবন অনেকবেশি আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে যারা ব্যবহার করে না তাদের তুলনায়," বলছিলেন মি, লংহার্স্ট।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতাদের আরেকজন নেইল স্লেটফোর্ড এটি সমর্থন করে বলেন, "এর বাজার অধিকাংশই যুগলদের দখলে। লাভহানির ৭০% ক্রেতাই এসব ব্যবহার করেন তাদের সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী করতে।"
৮. ৭০ শতাংশ সেক্স টয় উৎপাদন করে চীন
আপনি বিশ্বের যে প্রান্ত থেকেই সেক্স টয় কিনুন না কেন, এটির উৎপাদনের অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে পূর্ব এশিয়ায় কোনো অঞ্চলের।
উইলিয়াম নামে পরিচিত চীনের একটি কোম্পানির মালিক বলছিলেন যে, ২০বছর আগে যখন তিনি এর উৎপাদন শুরু করেন সে সময় থেকে অন্তত ২০গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে তার ব্যবসার পরিসর।
ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে এর রপ্তানি শুরু করাতেই এই বৃদ্ধি বলে মনে করেন তিনি।
৯. এর বিক্রি বেড়েই চলেছে
বিশ্ব বাজারে এর প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে বছরে শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ।
কিন্তু টেকনাভিওর মি. যশুয়ার মতে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যদি উন্নয়নশীল দেশের মানুষ সেক্স টয় সম্পর্কিত তাদের জড়তা এবং বাধা কাটিয়ে উঠতে পারে তবে প্রবৃদ্ধি হার ১০ থেকে ১৫শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে।
তার মতে, এগুলো বেশিরভাগই চীনে তৈরি এবং দামেও সস্তা। আর ইন্ডাস্ট্রির সৌভাগ্য এজন্যেও আসতে পারে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।