বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুই শর্ত দিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই জামিন দেন। হাইকোর্টের দেওয়া শর্ত দুইটি হলো—জামিন থাকাবস্থায় মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হকের জিম্মায় থাকবেন। এছাড়া আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি কোনো গণমাধ্যমে কথা বলতে পারবেন না। রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ২০ দিনের মাথায় গত ১৬ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্নিকে বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নেওয়া হয়। রিফাত হত্যকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে মিন্নির সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ওইদিনই মিন্নিকে আলোচিত এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। মিন্নি রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় প্রধান সাক্ষী ছিলেন।
গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে মিন্নি কারাগারে ছিলেন। তার জামিনের জন্য একাধিকবার আবেদন করা হলেও জামিন মেলেনি। অবশেষে ১ মাস ১৩ দিন পর হাইকোর্টের আদেশে মিন্নির জামিন মিললো। আদালতে এদিন মিন্নির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জেড আই পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পি। মিন্নির জামিন বিষয়ে তার আইনজীবী জেড আই পান্না বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ও ৪৯৮ ধারা ও মিন্নিকে যে প্রক্রিয়ায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে, সবদিক বিবেচনা করে আদালত বলেছেন রুল ইজ অ্যাবসুলেট। অর্থাৎ আদালত মিন্নিকে জামিন দিয়েছেন। এ সময় আদালত মিন্নিকে নির্দেশ দেন তিনি যেন কোনো গণমাধ্যমে কথা না বলেন।’ মেয়ের জামিন পাওয়ার বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এই জামিন মঞ্জুর হওয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কুচক্রীকারীদের পতন হোক এটিই আমরা চাই।’
গত বুধবার (২৮ আগস্ট) মিন্নির জামিন শুনানি শেষ হয়। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেন। গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নয়ন বন্ডের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয়জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ ফাঁস হলে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলে। ওই মামলায় প্রথমে মিন্নিকে সাক্ষী হিসেবে দেখানো হলেও, পরে এক আসামির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন নয়ন বন্ড। ঘটনার কয়েকদিন পর বন্দুকযুদ্ধে নয়ন বন্ডের মৃত্যু হয়।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।