প্রকাশ: ৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৮
জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চারজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলাম। বাকি তিনজন হলেন রাফাত বিন আলম মনু, রাশেদুল ইসলাম ও মশিউর রহমান।
বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে প্রসিকিউটর ফারুক আহমেদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে মামলার প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় যে সহিংসতা ঘটে, তাতে অভিযুক্তরা সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং পরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেন।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই সময় আন্দোলনের নামে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। নিহত ২৮ জনের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন ছাত্র ও পথচারী, যারা কোনোভাবেই সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তদন্তে উঠে এসেছে, ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত একটি হত্যাকাণ্ড।
তদন্তে আরও জানা গেছে, অভিযুক্ত চারজনের প্রত্যেকেই সেই সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বা সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। তারা আন্দোলন দমনের নামে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং এলাকাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ঘটনার ভিডিওচিত্র, সাক্ষী ও নথিপত্র ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত টিম সংগ্রহ করেছে।
প্রসিকিউটর ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আদালত এই মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। নিরীহ মানুষ হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধ কোনোভাবেই ক্ষমাযোগ্য নয়।”
অভিযোগপত্র দাখিলের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. শহীদুল আলম জানান, এখন ট্রাইব্যুনাল মামলাটি গ্রহণ করে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করবেন। আদালত প্রাথমিক শুনানির মাধ্যমে অভিযোগ গঠন করবেন কি না, সে বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
এই মামলাকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের বিচার সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথকে আরও সুদৃঢ় করবে এবং ভবিষ্যতে মানবতাবিরোধী অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে ভূমিকা রাখবে।
রামপুরা ও আশপাশের এলাকায় নিহতদের পরিবার এখনো ন্যায়বিচারের আশায় দিন কাটাচ্ছে। ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দাখিল হওয়ায় তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন বলে জানা গেছে। তারা আশা করছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এবার দোষীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হবে।