প্রকাশ: ৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৯
গাজা অভিমুখী মানবিক সহায়তা বহনকারী ‘কনশানস’ নৌযান থেকে আটক হয়েছেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম। বুধবার সকালে তিনি ফেসবুকে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় জানান, ইসরায়েলি বাহিনী সমুদ্রে তাদের জাহাজ আটক করেছে এবং তাকে অপহরণ করেছে।
ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম বলেন, “আমি শাহিদুল আলম, বাংলাদেশ থেকে একজন ফটোগ্রাফার ও লেখক। যদি আপনি এই ভিডিওটি দেখছেন, তবে বুঝবেন আমরা সমুদ্রপথে আটকানো হয়েছি এবং আমাকে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল গাজায় যে গণহত্যা চালাচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা রয়েছে। আমি আমার সব বন্ধু ও সহকর্মীদের আহ্বান জানাচ্ছি, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সংগ্রাম অব্যাহত রাখুন।”
ঘটনাটি আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজার সমুদ্রবন্দর ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা করা একটি নতুন ফ্লোটিলা ব্যর্থ হয়েছে এবং ইসরায়েলি নৌবাহিনী সব জাহাজ ও যাত্রীদের আটক করেছে। আটক জাহাজগুলো বর্তমানে একটি ইসরায়েলি বন্দরে নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আইনগত নৌবন্দর ভেঙে যুদ্ধে প্রবেশের এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। জাহাজ ও যাত্রীদের নিরাপদে বন্দরে আনা হয়েছে, তারা সবাই সুস্থ আছেন। দ্রুতই তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।”
ফ্লোটিলাটি ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের উদ্যোগে পরিচালিত হয়েছিল। নয়টি জাহাজ নিয়ে গঠিত এই ফ্লোটিলায় প্রায় ১০০ জন মানবাধিকার কর্মী ছিলেন, যারা গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠাতে চেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা ছিলেন, যার মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ইতালি থেকে যাত্রা শুরু করে ফ্লোটিলাটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরের পথে গাজা উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। তবে ইসরায়েলি নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঢোকার আগেই তাদের ঘিরে ফেলে। ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো শহিদুল আলমসহ অন্যান্য কর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে।
বাংলাদেশের শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শহিদুল আলমের আটক হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে তার নিরাপদ মুক্তির দাবিতে পোস্ট দিচ্ছেন এবং সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার এই প্রচেষ্টা ছিল সম্পূর্ণ মানবিক উদ্যোগ, কিন্তু ইসরায়েল তা দমনমূলকভাবে প্রতিহত করেছে। শহিদুল আলমের মুক্তির দাবি এখন আন্তর্জাতিক মহলে জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে।