প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:৩৪
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারিক প্যানেলে মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ৫৪তম সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন শেখ হাসিনার মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় দেশের ৪১ জেলায় ৪৩৮ স্থানে সরকারি বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালায়। এছাড়াও ৫০টিরও বেশি জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। তিনি জানান, আন্দোলনের সময় হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতা ঠেকাতে আসামিরা কোনো উদ্যোগ নেননি, বরং খুন, গুম ও জখমের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন।
জুলাই ও আগস্ট মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি নিক্ষেপ করে। আদালতে সাক্ষী তার জবানবন্দিতে বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরে বলেছিলেন যে, নিরীহ মানুষদের ওপর অপ্রয়োজনীয়ভাবে গুলি চালানো হয়েছে এবং হত্যা ও জখমের ঘটনা পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়েছে। এই নৃশংসতার প্রমাণ হিসেবে তিনি বিভিন্ন ভিডিও, প্রতিবেদনের ফটোকপি এবং প্রামাণ্যচিত্র আদালতে উপস্থাপন করেন।
এদিন ট্রাইব্যুনালে বিবিসি, আল-জাজিরা এবং যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদনসহ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সাক্ষী মো. আলমগীর আদালতকে জানিয়েছেন, প্রমাণগুলি সরকারের পরিকল্পিত নৃশংসতা এবং আন্দোলন দমন কৌশলকে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করে। তিনি বলেন, প্রমাণিত তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ মানুষদের ওপর গুলি চালানো এবং নির্যাতনের ঘটনা ছিল সুপরিকল্পিত এবং সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ এবং আবদুল সাত্তার পালোয়ান। আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন সাক্ষীদের জেরা করবেন। আদালতে চলমান এই প্রমাণ উপস্থাপনা ও সাক্ষীর জবানবন্দি মামলার দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সাক্ষী আলমগীর বলেন, এই ঘটনার পেছনে কোনো ব্যক্তিগত প্ররোচনা নয়, বরং রাষ্ট্রায়ত্ত বাহিনী ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পরিকল্পিতভাবে নৃশংসতা চালিয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই তথ্য ও প্রমাণাদি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যথাযথ বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
আদালতের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই আন্দোলনের সময়কার হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতার বিষয়টি আদালতে বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রমাণাদি যাচাই ও সাক্ষী জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করা হবে, যাতে বাস্তব ইতিহাসের যথাযথ বিচার নিশ্চিত হয়।