২০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা কাঠের সেতু

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১০ই নভেম্বর ২০২২ ০৫:৫৫ অপরাহ্ন
২০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা কাঠের সেতু

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের তুলশীগঙ্গা নদীর ২ পারের বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য নেই কোনো সেতু। তাই দুই পারের মানুষের জন্য নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা কাঠের সেতু। 


স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষা এলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নদীর ২ পারের বসবাসকারী প্রায় ২০ হাজার মানুষকে। এছাড়া, এই অঞ্চলের  ধান, গম, সরিষাসহ অন্যান্য পণ্য পারাপারে পড়তে হয় চরম বিপাকে। সেতু না থাকায় বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারী ও স্কুলশিক্ষাথীদের। 


বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, তুলশীগঙ্গা নদীর পশ্চিমে আছে, আলীহাট, কাশিয়াডাঙ্গা, ধাওয়ানশীপুর, মনসাপুর, কোকতাড়া, শখেরবাজার গ্রাম। আর পৃর্বদিকে বাঁশমুড়ি, আরজিপাড়া, বারো আড়িয়া, দক্ষিণ জামালপুর গ্রাম। এই ১০ গ্রামে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। স্থানীয়রা বলছেন, তাদের একমাত্র সংযোগ সড়ক আলীহাট থেকে কাশিয়াডাঙ্গা সড়ক। কিন্তু কাশিয়াডাঙ্গা তুলশীগঙ্গা নদীতে স্থায়ী কোনো সেতু না থাকায়  কাঠের সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। 


কোকতারা গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা বারবার শুধু প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচনের পর কোনো জনপ্রতিনিধিই  প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেন না।


কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের স্হায়ী বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নদীর পশ্চিমে আলীহাট মাদ্রাসা, ধাওয়ানশীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, পৃর্বদিকে বাঁশমুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা, বারো আড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ জামালপুর দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জিবনের ঝৃঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হয়।


বারোআড়িয়া ও কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রশিদ ও মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার সময় (২০০০) সালে এলাকাবাসী নিজস্ব অর্থে ২০০ ফুট লম্বা একটি কাঠের সেতু তৈরি করেন। বর্তমানে কাঠের সেতুটিরও ভঙ্গুর অবস্থা। কিছুদিন আগে কাঠের তৈরি পাটাতনগুলো পচে নষ্ট হয়ে যায়। নিচের কাঠের খুঁটিগুলো পানি আর কাঁদাতে ডুবে থাকায় ধীরে ধীরে ভেঙে যেতে শুরু করে। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এলাকাবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত কাঠের সেতুটি। পরে যদিও এলাকাবাসী জোড়াতালি দিয়ে সেতুটি মেরামত করেছে। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে ভ্যান, বাইকসহ বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীরা।


আলিহাট গাজী আমিনিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ফরহাদ রেজা বলেন, তুলশীগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ জরুরি। যদিও এখন পর্যন্ত কষ্ট করে পারাপার হচ্ছি। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা না হলে আমাদের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।


আলিহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামে আমার জন্ম। ছোট বেলা থেকে আমরা নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হয়েছি। সম্প্রতি করোনা কালিন সময়ে গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবক ও এলাকাবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে। বর্তমানে সেটিরও অবস্থা ভংগুর। স্থায়ী সেতু নির্মাণ আমার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিলো। আমি ইতিমধ্যে উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্থায়ী সেতু নির্মাণ এর কাজ শুরু হবে আশা করছি। 


হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গায় তুলশীগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হলে প্রায় ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে ওই এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন। আমি এবিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এর সাথে ইতিমধ্যে কথা বলেছি। খুব অল্প সময়ে স্থায়ী সেতুর কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। 


হাকিমপুর উপজেলা প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন বলেন, তুলশীগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই ট্রেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই তুলশীগঙ্গা নদীর ওপর স্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।