প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৫, ১১:২
গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে এক রক্তক্ষয়ী কবরস্থানে। প্রতিদিনই লাশের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে, হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই আহতদের এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে অসংখ্য প্রাণহীন দেহ। যুদ্ধবিরতি ও মানবিক করিডোরের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আহ্বান উঠলেও বাস্তবে ফিলিস্তিনিদের জন্য অপেক্ষা করছে আরও মৃত্যু ও ক্ষুধার যন্ত্রণা।
বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭০টি মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ৩৫৬ জন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যার যুদ্ধে নিহত হয়েছেন অন্তত ৬২ হাজার ১৯২ জন ফিলিস্তিনি। আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ১১৪ জনে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনেক ভুক্তভোগী এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে আছেন। উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে না পারায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মানবিক সাহায্য সংগ্রহের সময়ও ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি হামলার শিকার হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সাহায্য চাইতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১১৭ জনেরও বেশি। ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত সাহায্য চাইতে গিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৬ জনে, আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৬৪ জনেরও বেশি।
এছাড়া অনাহার ও অপুষ্টিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুর্ভিক্ষে ১১২ শিশুসহ মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭১ জনে। এ থেকে বোঝা যায়, গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
গত ১৮ মার্চ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পুনরায় গাজায় আক্রমণ শুরু করে, যা জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি ভেঙে দেয়। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৬৪৬ জন নিহত এবং ৪৫ হাজার ৭৩ জন আহত হয়েছেন।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৯ মে পর্যন্ত গাজায় নিহতদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ ছিলেন হামাস ও ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধা। বাকি ৮৩ শতাংশই সাধারণ বেসামরিক মানুষ।
বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়া ও সুদানের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধেও এত সংখ্যক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়নি। গণহত্যা বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকারকর্মী এবং এমনকি ইসরায়েলি শিক্ষাবিদরাও একে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, যদিও ইসরায়েলের সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য অস্বীকার করেছে।