ঝিনাইদহে আঞ্চলিক ভাষার সংরক্ষণে গুণীজন সংবর্ধনা

ঝিনাইদহ শিশু একাডেমী মিলনায়তনে শনিবার অনুষ্ঠিত গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব ও সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে আঞ্চলিক ভাষাকে শুধুমাত্র কথোপকথনের মাধ্যম নয় বরং একটি জাতির সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আবেগের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আঞ্চলিক ভাষা হারালে একটি প্রজন্মের স্মৃতি, শেকড় এবং জাতিগত সত্তাও হারিয়ে যায়, যা জাতির অস্তিত্বের জন্য এক বড় ক্ষতি। তাই ভাষাটিকে রক্ষা করা মানেই আমাদের অস্তিত্বকে রক্ষা করা।

আঞ্চলিক ভাষার সাহিত্যচর্চা, কবিতা, গান, গল্প ও নাটকের মাধ্যমে এই ভাষাকে জীবন্ত রাখার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া আঞ্চলিক শব্দভাণ্ডার, প্রবাদ, গল্প ও ইতিহাস ডিজিটাল আকারে সংরক্ষণ করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও তিনি তুলে ধরেন।

সংগঠনের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ কাজল তার বক্তৃতায় বলেন, “আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত হবে। তাই মাটির ভাষা, প্রাণের ভাষা রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব।” অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিহঙ্গ নাট্য গোষ্ঠীর পরিচালক শাহিনুর আলম লিটন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঝিনাইদহ আঞ্চলিক ভাষা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক আমেরিকা প্রবাসি তরিকুল ইসলাম মিঠু, চিত্রনায়ক নীরব হোসেন, খলনায়ক আশরাফুল হক ডন, পরিচালক হাসান জাহাঙ্গীর, কৌতুক অভিনেতা কাজল সহ জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় মানবাধিকার, সাংবাদিকতা, ক্রীড়া, ব্যবসা, ভাষা, শিল্প, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও গণমাধ্যম কর্মীসহ বিশিষ্টজনদের ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

ঝিনাইদহে আঞ্চলিক ভাষার সংরক্ষণ ও প্রচারে এই ধরনের উদ্যোগ দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। বিশেষ করে প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আঞ্চলিক ভাষার প্রসার নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই ভাষার মূল্যবোধ ও পরিচয় সহজেই পৌঁছে যাবে।

এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঝিনাইদহে আঞ্চলিক ভাষার সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এই ভাষার গুরুত্ব সবাইকে উপলব্ধি করানো হয়েছে। তাই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দিয়ে এই সাংস্কৃতিক ধারা বাঁচিয়ে রাখতে হবে।