পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতার পেছনে ভারত-আমেরিকার হাত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শুক্রবার ৪ঠা অক্টোবর ২০২৪ ০৬:৪৭ অপরাহ্ন
পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতার পেছনে ভারত-আমেরিকার হাত

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জাতিগত সহিংসতা এবং সোহেল রানা নামক এক স্কুলশিক্ষকের হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজ। তারা অভিযোগ করছেন, ভারত এবং আমেরিকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে পাহাড়ের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি' নামক শিক্ষার্থী প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।


বিক্ষোভে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা সোহেল রানা হত্যার বিচার এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। তারা বলেন, "পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং ভারত ও আমেরিকা এই ষড়যন্ত্রের পেছনে মদদ দিচ্ছে।" 


সমাবেশে সংগঠনটির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখতে হবে।” তিনি ভারতের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “ভারত সম্প্রতি আমাদের পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছে। একই কাজ ভারতীয় সেভেন সিস্টার্সের ক্ষেত্রেও করা হলে তারা শান্তিতে থাকতে পারবে না।”


এছাড়া, হিল হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট মিনহাজ ত্বকি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে বাঙালি শিক্ষকদের বের করে দেওয়ার জন্য 'ধর্ষণ নাটক' ব্যবহার করা হচ্ছে। সোহেল রানা হত্যাও এরই একটি অংশ।” তিনি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “পাহাড়ে উপজাতি ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবে না, এটাই তাদের উদ্দেশ্য।” 


বিক্ষোভে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। তারা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে সোহেল রানা হত্যার বিচার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। 


সমাবেশে মুহম্মদ জিয়াউল হক সরকারের কাছে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:


১. আদিবাসী’ ও ‘জুম্ম’ শব্দ ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা: বাংলাদেশে 'আদিবাসী' এবং 'জুম্ম' শব্দ ব্যবহার রাষ্ট্রদ্রোহিতা ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে এবং যারা এসব শব্দ ব্যবহার করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


২. জাতিগত বৈষম্যমূলক আইন সংস্কার: অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্ট বৈষম্যমূলক আইন সংস্কার করতে হবে এবং এক সংবিধান ও এক আইন প্রণয়ন করতে হবে।


৩. সোহেল রানা হত্যার বিচার: স্কুলশিক্ষক সোহেল রানার হত্যার সঙ্গে জড়িত এবং পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে তাদের বিচার করতে হবে। 


৪. উপজাতি কোটা বাতিল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি চাকরিতে উপজাতি কোটা বাতিল করতে হবে।


৫. নিরপেক্ষ ভূমিকায় বাংলাদেশ: বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির অংশ হিসেবে ভারতের বিপরীতে অবস্থান নিতে হবে এবং দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।


৬. সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি: পার্বত্য অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা নিরসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনা ক্যাম্প বাড়াতে হবে।


৭. ১৯৯৭ সালের চুক্তি বাতিল: উপজাতি কর্তৃক সশস্ত্র কার্যক্রম বন্ধ না করায় ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাতিল করতে হবে।


এই বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক ঘটনার গুরুত্ব এবং এর নেপথ্যে চলমান ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চায়। তারা আশা করছেন, সরকারের সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের অখণ্ডতা রক্ষা হবে এবং জাতিগত সংঘাত বন্ধ হবে। 


এদিকে, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে শিক্ষার্থীরা আশা করছেন যে, তাদের দাবিগুলো শুনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তারা বিশ্বাস করেন, সুষ্ঠু ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সমাজের সকল স্তরের মানুষের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি।