ঢাকা থেকে চলাচলকারী উত্তরবঙ্গগামী বাসে হঠাৎ করেই বেড়েছে গণডাকাতির ঘটনা। বিভিন্ন পরিবহনের কর্মীরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ লকডাউন শেষে পরিবহন চালু হওয়ার পর হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ডাকাতির ঘটনা। তবে পুলিশ প্রশাসন বলছে, ডাকাতি ঠেকানো এবং যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে রাতে মহাসড়কে টহল কার্যক্রম আরও বাড়ানো হয়েছে।
রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে ১৯ অগাস্ট ভোর ৩টার দিকে ঢাকা থেকে রংপুরগামী একটি নৈশ কোচে ডাকাতি শেষে ডাকাতরা গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে নেমে যায়। এরপর যাত্রীদের চিৎকারে বাসটি সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট বাজারে থামান চালক।
রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে ১৯ অগাস্ট ভোর ৩টার দিকে ঢাকা থেকে রংপুরগামী একটি নৈশ কোচে ডাকাতি শেষে ডাকাতরা গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে নেমে যায়। এরপর যাত্রীদের চিৎকারে বাসটি সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট বাজারে থামান চালক।
রাজধানীর গাবতলীতে এনা পরিবহনের উত্তরবঙ্গের বাস কাউন্টারে একটি সতর্কবার্তায় ‘মহাসড়কে আকস্মিক ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায়’ পরিবহনকর্মীদের কিছু বিষয় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, “নাইটকোচের যাত্রীদের ভিডিও ধারণ করতে বলা হয়েছে। যেখান-সেখান থেকে যাত্রী তুলতে একেবারেই নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন যাত্রাপথে রেস্তোঁরায় বিরতির পর আরেকবার ভিডিও করতে বলা হচ্ছে। “এছাড়া আমরা পুলিশের সঙ্গেও সহযোগিতা চেয়ে কথা বলছি।“ নিজেদের কর্মীদের জন্য দেওয়া এনা পরিহনের ওই নোটিসে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলগামী বাসের কর্মীরা বগুড়া ও গাইবান্ধা পয়েন্টে সর্বোচ্চ সজাগ থাকবেন। এছাড়া গাড়ি ছাড়ার আগে যাত্রীদের চেহারা ভিডিও করা, কাউন্টার ছাড়া অন্য কোথাও যাত্রী না তোলা, মহাসড়ক ছাড়া কোনো বাইপাস সড়ক বা স্থানীয় সড়ক ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে ওই নোটিসে।
বাসচালক হত্যা:
বিভিন্ন পরিবহনের সতর্ক থাকার মধ্যেই গত বুধবার ভোররাতের দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে গাইবান্ধার চম্পাগঞ্জে হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি নৈশকোচে ডাকাতি হয়। যাত্রীবেশী ডাকাতদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন গাড়িটির চালক মনজুর হোসেন (৫৫)। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসটিতে ৩০ জনের মত যাত্রী ছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে বাসটি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরে এলে যাত্রীবেশী ডাকাতেরা বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ছুরিকাঘাতে আহত ৪:
এসময় চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে না চাইলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। যাত্রীদের অলঙ্কার, মোবাইল, নগদ টাকা লুটে পলাশবাড়ী এলাকায় নেমে যায় ডাকাতেরা। এ ঘটনায় রংপুরের পীরগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন বাসটির সুপারভাইজার। পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরেস চন্দ্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ডাকাতি ও হত্যার ঘটনায় পুলিশ শনিবার পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে শনিবার রাত পৌনে দুইটার দিকে র্যাব এই বাস ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে।
এ বিষয়ে এসএমএস পাঠিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা জানায়, সম্প্রতি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ এলাকায় হানিফ পরিবহনের চালক হত্যাসহ বাস ডাকাতির সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা বাস ডাকাত চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডাকাতিতে স্থানীয় অপরাধীরা:
এর আগে গত ২৩ অগাস্ট রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট থানার ফলিমারি বিল এলাকার সড়কে ঢাকাগামী তিনটি বাস আটকে যাত্রীদের মধ্যে লুটপাট চালায় ডাকাতেরা। এসময় ধারালো অস্ত্রধারী ডাকাতদের মারধরের শিকার হন পরিবহনকর্মী ও যাত্রীরা। ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, ডাকাতির ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, লুট হওয়া মালামালও উদ্ধার হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সবাই আশপাশের এলাকার। এদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে আগের মাদক মামলা রয়েছে।
চালকদের সতর্ক করা হচ্ছে:
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের অন্যতম মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, “ডাকাতির বিষয়টা আসলেই উদ্বেগের। এখানে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয় আছে, ট্রাকের মালামালের বিষয় আছে। “কোভিডের কারণে এক শ্রেণির মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নাই বললেই চলে। এসব কারণে তাদের কারও মধ্যে খারাপ প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে বলা যায়। এ পরিস্থিতিতে আমরা সব সেকশনের ম্যানেজারদের বলে দিয়েছি যেন বাস ছাড়ার আগে সব যাত্রীদের ভিডিও ধারণ করা হয়। এখন তো মোবাইলেও ভিডিও নেওয়া যায়। যাত্রীবেশী ছাড়া বাস থামানো কঠিন।“
দেশের প্রধান হাইওয়েগুলোতে রাতের বেলায় পুলিশ টহল থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কিছুক্ষণ পরপর রাস্তার পাশে পুলিশের ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে দেশের প্রত্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চল যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট কিংবা মেহেরপুরের মুজিবনগর, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী বা ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল এসব এলাকার কথা ভিন্ন।
“পরিবহনকর্মী বিশেষ করে ট্রাক চালকদের বলা হয়েছে প্রত্যন্ত এসব এলাকায় গভীর রাতে না যেতে। প্রয়োজনে নিরাপদ কোনো জায়গায় বিশ্রাম নিয়ে একটু আলো ফোটার পরে তারা যেন আবার যাত্রা শুরু করেন। এ বিষয়ে তাদের সচেতন হতে বলা হচ্ছে।“
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মুনশী শাহাবুদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শনিবার দুপুরেই আমরা বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করলাম। তাদের বলা হয়েছে, রাতের বেলা বাসগুলোকে ক্লাস্টার আকারে (কয়েকটি একসঙ্গে) চালানোর জন্য। “আশা করি এভাবে চললে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা ২৪ ঘণ্টাই রাস্তায় আছি, রাতে টহল কার্যক্রম আরও বাড়ানো হয়েছে।“