সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির প্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে রেলপথ অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা ছিল। তবে তা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী। তিনি বলেন, আজ বেলা ১১টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তাদের একটি বৈঠক রয়েছে এবং সেই বৈঠকের ফলাফলের ওপর নির্ভর করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জুবায়ের জানান, বৈঠক সন্তোষজনক হলে রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে। অন্যথায়, শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে আন্দোলন জোরদার করবে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার আশায় আপাতত অবরোধ স্থগিত রাখা হলেও ছাত্রসমাজ প্রস্তুত রয়েছে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে কর্মসূচির ঘোষণা দেন জুবায়ের পাটোয়ারী। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি উদাসীনতা দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, “একজন প্রিন্সিপালকে বদলি করতেও যদি পুরো দিন লেগে যায়, তাহলে সরকার কিভাবে আমাদের ছয় দফা বাস্তবায়ন করবে?”
তিনি আরও বলেন, “আমরা দেশ ও জাতির উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব বারবার তুলে ধরেছি। কিন্তু সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহল তা তাচ্ছিল্য করছে। আমাদের দাবি উপেক্ষিত হলে, আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা পরিবর্তন আনব। এটি এখন আর শুধুমাত্র দাবি নয়, একটি জাতীয় সংস্কারের ডাক।”
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতি বাতিল, কারিগরি সেক্টরে অকারিগরি জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধকরণ এবং পলিটেকনিক থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার উন্নত সুযোগ নিশ্চিত করা। এছাড়াও, ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু, ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের উপযুক্ত পদে নিয়োগ নিশ্চিত এবং স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবিও রয়েছে।
আন্দোলনকারীরা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে কারিগরি শিক্ষার প্রতি অবহেলার ফলে শিক্ষার্থীরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা বলছেন, কারিগরি শিক্ষাকে মূলধারায় আনতে হলে এই ছয়টি দাবির বাস্তবায়ন জরুরি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই এসব দাবি পূরণ সম্ভব।
এদিকে, ছাত্রদের এ দাবিগুলোকে ঘিরে পলিটেকনিক ক্যাম্পাসগুলোতে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত এবং তারা স্পষ্ট করেছে, ফলপ্রসূ আলোচনা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সারাদেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও। তারা বলছে, এই আন্দোলন শুধু কিছু শিক্ষার্থীর দাবি নয়, এটি একটি শিক্ষাব্যবস্থার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন।
এখন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ফলের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা ছাত্রসমাজ। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না এলে, তারা রাস্তায় নামবে আরও বড় কর্মসূচি নিয়ে।