মৌলভীবাজার জেলার চা-বাগান অধ্যুষিত শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু প্রায় এক মাস ধরে এ হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রসূতিরা।
সরকারি হাসপাতালে সিজার অপারেশন বন্ধ থাকায় শত শত প্রসূতিকে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে, যা অতিরিক্ত ব্যয়বহুল এবং অনেকের সামর্থ্যের বাইরে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে গাইনি ও অপস বিভাগে ডা. মনিকা বিশ্বাস জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে যোগদান করেন এবং ২০১৩ সাল থেকে কর্মরত ছিলেন মেডিকেল অফিসার ডা. রোকসানা পারভিন। তবে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি ডা. মনিকা ডেপুটেশনে সিলেটের খাদিমপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে যান। পরে ৯ মার্চ শ্রীমঙ্গলে যোগ দিলেও ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি নিয়ে ফের ৭ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত মেডিকেল ছুটিতে চলে যান। অন্যদিকে, ২৪ মার্চ ডা. রোকসানা পারভিনকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
ফলে বর্তমানে শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো গাইনি কনসালটেন্ট না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে।
মুসলিমবাগ এলাকার সাহেনা আক্তার জানান, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে তাকে প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে হয়েছে। চা-বাগানের শ্রমিক দয়াল বোনার্জি বলেন, “আমার স্ত্রীকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু জানতে পারলাম সিজার হচ্ছে না, তাই অনেক খরচে প্রাইভেট হাসপাতালে নিতে হয়েছে।”
সাতগাঁও এলাকার জুয়েল মিয়া বলেন, “বোনের প্রসবব্যথা উঠলে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি, এখানে অপারেশন হয় না। পরে জরুরি ভিত্তিতে প্রাইভেট হাসপাতালে অপারেশন করাতে হয়।”
এ বিষয়ে গাইনি চিকিৎসক ডা. মনিকা বিশ্বাসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শারমীন আক্তার বলেন, “গাইনি চিকিৎসক ছুটিতে থাকায় প্রায় ২০ দিন ধরে সিজার বন্ধ রয়েছে। তবে নরমাল ডেলিভারি চালু আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া তাসমিন বলেন, “আমাদের মাত্র একজন গাইনি চিকিৎসক। তিনি ছুটিতে থাকায় অপারেশন বন্ধ। সিভিল সার্জনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।”
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান জানান, “গাইনি চিকিৎসকের অভাবে সিজার অপারেশন সাময়িক বন্ধ রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপারেশন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
এদিকে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন, চর্ম, গাইনি, কার্ডিওলোজি, নাক-কান, চক্ষু) সহ ৬টি গুরুত্বপূর্ণ পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষত চা-শ্রমিক সম্প্রদায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী মৌলভীবাজার সদর বা সিলেট যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে তাদের আর্থিক ও শারীরিক ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।