দেশের পোল্ট্রি খাতে চলমান সংকট, কর্পোরেট কোম্পানির প্রভাব ও প্রান্তিক খামারিদের ক্ষতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যদি তাদের ১০ দফা দাবি পূরণ না হয় তবে পহেলা মে থেকে সারাদেশে প্রান্তিক খামারগুলোতে ডিম ও মুরগির উৎপাদন বন্ধ রাখা হবে। তারা অভিযোগ করেছেন, গত দুই মাসে প্রান্তিক খামারিরা প্রায় ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন।
বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার জানান, রমজান ও ঈদ মৌসুমেও খামারিরা প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ কেজি মুরগি উৎপাদন করেছেন এবং প্রতি কেজিতে গড়ে ৩০ টাকা করে লোকসান গুণেছেন। এর ফলে শুধুমাত্র মুরগিতেই এক মাসে লোকসান হয়েছে ৯০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ডিমের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৪ কোটি ডিম উৎপাদনের মধ্যে প্রান্তিক খামারিরা ৩ কোটি ডিম উৎপাদন করলেও, প্রতি ডিমে গড়ে ২ টাকা করে লোকসান হয়েছে, যার মোট পরিমাণ ৩৬০ কোটি টাকা।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে একটি শক্তিশালী কর্পোরেট সিন্ডিকেট ডিম, মুরগি, বাচ্চা, ফিড এবং ওষুধের দাম নির্ধারণ করছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে খামারিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং একপ্রকার বাধ্য হয়েই ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ নামক কর্পোরেট নির্ভরতার মধ্যে ঢুকতে হচ্ছে। এতে প্রান্তিক খামারিরা স্বনির্ভরতা হারাচ্ছেন ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তিনি জানান, ঈদের আগে ২৮–৩০ টাকায় উৎপাদিত বাচ্চা কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ৭০–৮০ টাকায় বিক্রি করেছে, যা এখন আবার কমে ৩০–৩৫ টাকায় এসেছে। ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ১৬০–১৭০ টাকা হলেও কর্পোরেট কোম্পানিগুলো তা ১২০–১২৫ টাকায় বিক্রি করে, যা সরাসরি খামারিদের লোকসানে ঠেলে দেয়। একইভাবে ডিমের উৎপাদন খরচ যেখানে ১০–১০.৫০ টাকা, বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৮–৮.৫০ টাকায়।
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানায়, খামারিরা এখন বাঁচার লড়াই করছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকার যদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে ১ মে থেকে সারাদেশের প্রান্তিক খামারিরা খামার বন্ধ রেখে কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন। সংগঠনটি আশা করছে, সরকার দ্রুত সিন্ডিকেট ভাঙতে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেবে। এই আন্দোলন খামারিদের অস্তিত্ব রক্ষার দাবি বলেও জানান তারা।