প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৩:৪৬
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
দীর্ঘ দেড় দশক পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠক—ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি)। এই বহুল প্রত্যাশিত বৈঠকে দুই দেশের নানা দ্বিপাক্ষিক ইস্যু আলোচনায় এলেও, অতীতের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে পাকিস্তানের অনমনীয় অবস্থান আবারও হতাশ করেছে ঢাকাকে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জোরালোভাবে উত্থাপন করা হয়। সেইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব সময়ে অভিন্ন সম্পদের বণ্টন এবং বকেয়া ৪৩২ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়টিও গুরুত্ব পায়।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, আটকে থাকা পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, বৈদেশিক সাহায্য তহবিল হস্তান্তর এবং ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা অর্থ হস্তান্তরের বিষয়গুলোও আলোচনায় স্থান পায়। তিনি বলেন, এসব দাবির মধ্যে কোনোটি নতুন নয়, বরং বহু বছর ধরে ঝুলে আছে।
তবে, বৈঠকের একদিন পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। বিবৃতিতে শুধু ভবিষ্যতের সম্ভাবনা, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ও অভিন্ন ইতিহাসের কথা বলা হয়, যেন অতীতের জটিলতাগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয় পরিকল্পিতভাবেই।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ইসলামাবাদ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও অতীতের দায় স্বীকারে অনাগ্রহ স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। বরং তারা কৃষি, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং কানেক্টিভিটি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
এফওসিতে করাচি-চট্টগ্রাম সরাসরি জাহাজ চলাচল ও বিমান সংযোগ পুনরায় চালুর বিষয়েও আলোচনা হয়। বাংলাদেশ প্রস্তাব দিয়েছে সামুদ্রিক বিষয়ে কারিগরি সহযোগিতা বাড়ানোর, আর পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ দিতে চায়।
সবশেষে বলা যায়, দুই দেশের আলোচনায় আন্তরিকতার ছাপ থাকলেও, পুরনো ক্ষতের নিরাময়ে পাকিস্তানের অনীহা সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতি নির্ধারণে বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে থাকছে।