‘ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতিতে’ আগুন দিলো কালো মাস্ক পরে এক দুষ্কৃতিকারী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বাংলা নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা মূল মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনা এখন শহরের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। গত ১১ এপ্রিল ভোরে এই ঘটনাটি ঘটে, এবং সিসিটিভি ফুটেজে আগুন দেয়ার সময়ের ছবি ধরা পড়েছে। ফুটেজে দেখা গেছে, একজন ব্যক্তি যিনি কালো মাস্ক পরিহিত ছিলেন এবং জিন্স পরেছিলেন, ঠান্ডা মাথায় সেই মূল মোটিফে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘটনার বিস্তারিত বিশ্লেষণ করলে, জানা যায় যে আগুন দেয়ার সময় ওই ব্যক্তি বেশ সতর্কভাবে কাজটি করেছেন। তবে তার পরিচয় এখনও জানা যায়নি, যা তদন্তকারীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইসরাফিল রতন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের পর তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে ওই ব্যক্তি ওই মোটিফে আগুন লাগিয়েছেন। এদিকে, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম চঞ্চলও ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মূল মোটিফটি যা তৈরি করা হয়েছিল, তা ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিকে টার্গেট করে তৈরি করা হয়েছিল এবং আগুন দেওয়া হয়েছে যাতে পুরো মোটিফটি পুড়ে যায়। আগুনের তীব্রতার কারণে পায়রার অবয়বটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ ঘটনায় চারুকলার এক শিক্ষার্থী জানান, মোটিফটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে ছিল এবং সেটি শোভাযাত্রার জন্য খুব শীঘ্রই প্রস্তুত হয়ে যেত। তিনি এই ঘটনাকে একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে মনে করছেন এবং বলেন, এটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। শিক্ষার্থীর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি প্রশাসন ও পুলিশকেও সন্দেহের চোখে দেখতে পরামর্শ দেন, কারণ ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ উঠেছে যে, এর পেছনে প্রশাসনের লোকজনেরও হাত থাকতে পারে, এবং তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা উচিত। এতে করে পুরো বিষয়টি আরও রহস্যময় হয়ে উঠেছে। পুলিশের তদন্তের মধ্যে, এখন পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি, কিন্তু ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসনের জন্য একটি বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে। সবাই আশা করছে যে দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার নেপথ্যে যারা আছে তাদের চিহ্নিত করা হবে।

এ ঘটনাটি পুরো ক্যাম্পাসে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তাঁরা মনে করেন, এটি শুধুমাত্র একটি সামাজিক প্রতিবাদ নয়, বরং একটি গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও হতে পারে। অনেকেই বলেন, এমন এক সময়ে যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, তখন এমন একটি ঘটনা উদ্বেগের কারণ হতে পারে।