অবশেষে গ্রেপ্তার হলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ক্রিম আপা’ নামে পরিচিত শারমিন শিলা। ভিউ এবং অনলাইনে অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে নিজের সন্তানদের উপর নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর আশুলিয়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত পৌণে ৮টা ৩০ মিনিটে তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন। এর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাভারের পৌর এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শারমিন শিলা পেশায় একজন বিউটিশিয়ান। তিনি বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ও রূপচর্চার ক্রিম তৈরি করে বিক্রি করতেন, যার কারণে সামাজিক মাধ্যমে ‘ক্রিম আপা’ নামে পরিচিতি পান। অনলাইনে জনপ্রিয়তা পেতে এবং অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে তিনি নিজের দুই শিশুসন্তানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ভিডিও তৈরি করতেন এবং তা ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করতেন।
গত ৩০ মার্চ বিকাল ৪টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করেন শারমিন শিলা। ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং সমালোচনার ঝড় উঠে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি তার দুই বছর বয়সী কন্যাশিশুকে জোর করে মুখে কেক জাতীয় কিছু খাওয়াচ্ছেন। আরও ভিডিওতে দেখা গেছে, শিশুদের ক্যামেরার সামনে এনে জোর করে চুল কাটা, রং করা, ভারী দুল পরানো, কুলকুচি করানো, গালিগালাজ, শারীরিক নির্যাতন ও অপমানজনক আচরণ করা হচ্ছে।
এক বছর ধরে শিশুদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ করে ভিডিও তৈরির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শিশুদের ওপর এসব আচরণ তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং তারা ভয়ভীতির মধ্যে বেড়ে উঠছে।
এ ঘটনায় বাদী হিসেবে মামলা দায়ের করেন সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কাজী ইসরাত জামান। মামলা দায়েরের পরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয় এবং দ্রুত অভিযান চালিয়ে শারমিন শিলাকে গ্রেপ্তার করে।
আশুলিয়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, “শিশু আইনের ৭০ ধারায় শারমিন শিলার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা ও নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বিষয়টি স্বীকার করেছে।”
শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং অনলাইন অপব্যবহার রোধে এমন পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই ঘটনা দেশের অন্যান্য অনলাইন কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্যও সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকর্মীরা।