খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধভাবে পাহাড় কাটার কাজ চলছে, যা পরিবেশের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা চেষ্টা সত্ত্বেও, এই কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসনের অভিযান চালানোর পরেও কিছু অজানা কারণে অভিযুক্তরা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। অবশেষে, শুক্রবার গভীর রাতে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্পের সেনা ও মানিকছড়ি থানা পুলিশের সদস্যরা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে পাঁচজন অপরাধীকে আটক করেছে।
এই অভিযানে আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে মো. আব্দুল হাই, শওকত হোসেন সাকিব, সুমন, থোয়াইউ মারমা (২২), এবং আকতার হোসেন। তাদের কাছ থেকে একটি ড্রেজার মেশিন, তিনটি মিনি পিকআপ এবং একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
মানিকছড়ির বিভিন্ন এলাকায়, যেমন গচ্ছাবিল, গুচ্ছগ্রাম, তিনটহরী, যোগ্যাছোলা, সাপমারা, কালাপানি, বাটনাতলী, ডাইনছড়ি, এবং নামারপাড়া, রাতের আঁধারে অবাধে পাহাড় কাটা হচ্ছে। এই সব এলাকায় বর্তমানে পাহাড়ের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় মানুষজন জানিয়েছেন, এসব কাজের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একাধিক অভিযোগ করা হলেও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। ফলে, রাতের অন্ধকারে কার্যক্রম চলছে এবং পাহাড় কাটার কাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে।
মহানগরের প্রশাসন এবং স্থানীয় পুলিশ বাহিনী একাধিকবার অভিযান চালিয়েও, পাহাড় কাটার এই চক্রটিকে দমন করতে পারছে না। একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান, অন্যদিকে অপরাধীদের সচেতনতা নেই, ফলে অবৈধ পাহাড় কাটা থামানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অভিযানের পরেও কোনো ফলস্বরূপ পরিবর্তন আসে না, যেহেতু এসব চক্রের সদস্যরা তাদের কাজ চালিয়ে যায়। তারা আরও জানান, পাহাড় কাটার ফলে স্থানীয় পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, যা ভবিষ্যতে তাদের জীবনযাত্রাকে বিপদে ফেলতে পারে।
মানিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল এই অভিযান সম্পর্কে বলেন, "আমরা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করেছি, যাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মামলা রুজু করা হয়েছে।" তিনি আরও জানান, এই ধরনের অভিযান চলমান থাকবে এবং অবৈধ পাহাড় কাটা ঠেকাতে প্রশাসন সক্রিয় থাকবে।
অপরদিকে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আফরোজ ভূঁইয়া জানিয়েছেন, অবৈধভাবে পাহাড় কাটা এবং বালু উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, "এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৫০০ ঘনফুট অবৈধ বালু উত্তোলন করে উদ্ধার করা হয়েছে এবং এটি নিলাম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "এমন ধরনের অপরাধ বন্ধে আমাদের অভিযান চলতে থাকবে এবং পরিবেশের ক্ষতি রোধে আমরা সকল সম্ভাব্য ব্যবস্থা নেবো।"
এছাড়া, কিছু স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে, অনেক সময় প্রশাসনকে অভিযোগ জানালেও তাতেও খুব একটা সাড়া পাওয়া যায় না। তারা মনে করেন, অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু উচ্চপদস্থ লোকজন রয়েছে, যারা এই কাজকে অবৈধ হলেও সেসব বিষয়ের প্রতি কোনো গুরুত্ব দেন না। ফলে, সাধারণ মানুষ এর শিকার হচ্ছেন।
অভিযানে আটককৃতদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার প্রক্রিয়া চলছে এবং পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যাতে করে ভবিষ্যতে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে, এলাকার পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের উপর আরো ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। স্থানীয় প্রশাসন এই অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে এবং পরিবেশের সুরক্ষায় আরো কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় জনগণ।
এমনকি, পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে একদিন এই সমস্যা সমাধান হতে পারে, তবে তার জন্য স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের একযোগ কাজ করা প্রয়োজন। পাহাড় কাটা বন্ধ করা এবং পরিবেশ সুরক্ষিত রাখা এখন সময়ের দাবি, এবং এটি একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ফলেই সম্ভব হতে পারে।
এভাবে, মানিকছড়ি উপজেলায় অবৈধভাবে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের ফলে, কিছু সাফল্য দেখা গেছে। তবে এই সমস্যা সম্পূর্ণরূপে দূর করতে হলে আরো কার্যকরী পদক্ষেপের প্রয়োজন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।