বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক নারী ও শিশুদের নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা উঠে এসেছে গুম সংক্রান্ত কমিশনের প্রতিবেদনে। এতে গর্ভবতী নারীদের গুম এবং মায়ের সঙ্গে আটক শিশুদের বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। একজন মেয়ে, যাকে মায়ের সঙ্গে আটক করা হয়েছিল, এখনো তার মাকে খুঁজে পায়নি।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গুম সংক্রান্ত কমিশনের বরাতে কিছু ঘটনার সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়। তদন্তে দেখা যায়, নারীদের জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় প্রমাণিত কিছু ভয়ংকর তথ্য রয়েছে। অনেক নারী তাদের সন্তানসহ নিখোঁজ হন, এমনকি গর্ভবতী থাকাকালীনও। গুমের শিকার নারীদের অনেকেই সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে দ্বিধা করেন।
কমিশনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এক মা ও তার মেয়েকে র্যাবের হাতে আটক করার পর রাতভর নির্যাতন করা হয়। পরদিন মেয়েটিকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়, কিন্তু তার মা আর ফিরে আসেনি। বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক সেই মেয়েটি নির্যাতনের স্থান সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছে।
এ ধরনের ঘটনায় মায়েদের সন্তানদের সঙ্গে আটক রাখার প্রবণতা ছিল স্পষ্ট। এক ভুক্তভোগী গর্ভবতী নারী জানিয়েছেন, তাকে এক মাস ধরে আটক রাখা হয়েছিল এবং তার ৩ ও ১৮ মাস বয়সী সন্তানদেরও তার সঙ্গে বন্দি করা হয়। নির্যাতনের সময় তাকে মারধরও করা হয়, যা তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থাকে আরও বিপন্ন করে তোলে।
কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শিশুদেরও আটকের সময় ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। একজন শিশুর সাক্ষাৎকারে জানা যায়, মাত্র ছয় বছর বয়সে তাকে তার মায়ের সঙ্গে সিটিটিসিতে আটক রাখা হয়। এসব ঘটনার পেছনে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ থেকে ঢাকার সিটিটিসি কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
আরেকটি প্রতিবেদনে এক পুরুষ ভুক্তভোগী বর্ণনা করেছেন, তার স্ত্রী ও নবজাতক সন্তানকে থানায় আটক করে মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। এমনকি শিশুকে দুধ খাওয়ানোর অনুমতিও দেওয়া হয়নি। এটি তার ওপর মানসিক চাপ বাড়ানোর একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মা ও শিশুকে গুম করার এ চর্চা ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ব্যাপক আকার ধারণ করে। এসব ঘটনার যথাযথ তদন্তের জন্য কমিশন জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে। ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং তাদের মানসিক ও শারীরিক পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
গুমের শিকার নারীদের সাহসিকতা এবং তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশের ইচ্ছা এ সমস্যার প্রতি সমাজের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এ ধরনের অপরাধের প্রতিকার নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।