ধান ও আমের জন্য বিখ্যাত নওগাঁ জেলা এখন মৎস্য উৎপাদনেও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। শত শত পুকুর-দীঘিতে মাছ চাষের মাধ্যমে জেলাজুড়ে এক নীরব বিপ্লব ঘটেছে। নিবন্ধিত ৩২টি মৎস্য রেনু উৎপাদনকারী হ্যাচারির মাধ্যমে জেলার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলাতেও রেনু সরবরাহ করা হচ্ছে।
নওগাঁ জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে জেলায় উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির রেনু পোনার পরিমাণ ১২.৯০ মেট্রিক টন, যার থেকে মাছের সংখ্যা প্রায় ২৬ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। তবে নিবন্ধনের বাইরে অনিবন্ধিত হ্যাচারিগুলোতে পোনা উৎপাদন ও বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এতে গুণগত মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মৎস্য চাষিরা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আলী জানিয়েছেন, হ্যাচারিগুলোর কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করা হয় এবং মান নিয়ন্ত্রণে উপজেলা পর্যায়ে তদারকি ও প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। তিনি আরও বলেন, “রেনু উৎপাদনকারী ও মৎস্যচাষিদের গুণগত মান সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।”
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সরেজমিনে দেখা গেছে, হ্যাচারিগুলোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ‘ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত এবং তারাই মূলত রেনু উৎপাদনের দক্ষতা ও মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছেন। যেসব হ্যাচারিতে দক্ষ ‘ডাক্তার’ রয়েছেন, সেগুলোর রেনুপোনার চাহিদাও বেশি।
নওগাঁ সদরে ৫টি, রানীনগরে ১৬টি, আত্রাই ও মহাদেবপুরে ২টি করে, পত্নীতলা, ধামইরহাট ও বদলগাছীতে ১-৩টি করে নিবন্ধিত হ্যাচারি রয়েছে। তবে মান্দা, নিয়ামতপুর, সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় এখনও কোনো হ্যাচারি নেই। নিবন্ধন ফি, ফরম ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এই হ্যাচারিগুলো অনুমোদিত হয়।
মৎস্য চাষিরা জানান, মাছের মৌসুমি চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়। আব্দুল জব্বার বলেন, “যখন যে মাছের চাহিদা থাকে, সেই অনুযায়ী চাষ করি যাতে সঠিক সময়ে বাজারজাত করা যায়।” অন্যদিকে আতিকুর রহমান জানান, বড় সাইজের মাছ উৎপাদন সময়সাপেক্ষ হলেও লাভ বেশি।
রেনু উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা যুক্ত হওয়ায় নওগাঁর মাছ এখন দেশের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখছে।