মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি বনরেঞ্জ, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ তিনটি বনবিটে গাছ ও বাঁশ চুরি এবং বন উজাড়ের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। বন বিভাগের অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে এসব সংরক্ষিত বনাঞ্চল ক্রমেই ফাঁকা হয়ে পড়ছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও রাজকান্দি রেঞ্জ এলাকা থেকে গত দুই মাসে কয়েক লাখ টাকার আগর, সেগুন ও বাঁশ চুরির ঘটনা ঘটেছে।
লাউয়াছড়ার প্রধান ফটক ও ডরমিটরি এলাকা থেকে চুরি হওয়া মূল্যবান গাছের ঘটনায় এক বন প্রহরীকে প্রত্যাহার করেছে বন বিভাগ। বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বন চোরচক্রের সঙ্গে আঁতাত, গোপন সমঝোতা ও অনিয়মের অভিযোগও উঠে এসেছে। স্থানীয়রা বলছেন, বন বিভাগের একশ্রেণির অসাধু কর্মচারী ও করাতকল মালিকদের যোগসাজশে কাঠ ও বাঁশ পাচার নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৩২টি বৈধ-অবৈধ করাতকল সক্রিয় রয়েছে। এসব করাতকলের অজুহাতে চা-বাগান ও সংরক্ষিত বনের গাছ চেরানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে শুধু পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে না, সরকারও হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব। পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে গড়ে ওঠা এসব করাতকল ঘিরে গড়ে উঠেছে এক ধরনের প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
বন বিভাগের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগও তুলেছেন স্থানীয় ভিলেজাররা। সম্প্রতি আদমপুর ইউনিয়নের সাঙ্গাইসাফী এলাকায় এক নিরীহ বাঙালি নারী মরিয়ম বিবির কাঁচা ঘর উচ্ছেদ করে বন বিভাগ। অথচ খাসিয়া সম্প্রদায়ের ইটের পাকা ঘরগুলো অক্ষত রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আর্থিক সুবিধা না দিলে বাঙালি ভিলেজারদের উচ্ছেদ করা হয়, কিন্তু খাসিয়াদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়।
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে অভিযান হলেও অনেক সময় সমঝোতার মাধ্যমে তা নিস্পত্তি করা হয়। বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। সমিল মালিকদের নিকট থেকে মাসিক চাঁদা এবং বিভিন্ন দিবসে বন অফিসের জন্য অনুদান নেওয়ার প্রমাণও মিলেছে।
রাজকান্দি রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রীতম বড়ুয়া অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, অবৈধ ঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং সমিল মালিকদের সঙ্গে সমঝোতার সুযোগ নেই।
বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে লাউয়াছড়ার দুর্লভ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য। কমলগঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এক সময়ের ঘন অরণ্য এখন ফাঁকা হতে চলেছে। পরিবেশকর্মী আব্দুল আহাদ বলেন, যেভাবে গাছ কাটা হচ্ছে, তাতে বনের অস্তিত্ব ও চা-বাগানের উৎপাদন দুই-ই হুমকির মুখে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এতে প্রায় ৪৬০ প্রজাতির বিরল উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। অথচ সংরক্ষণের অভাবে বনটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বন বিভাগ ও প্রশাসনের সক্রিয় নজরদারি ছাড়া এই ধ্বংসযজ্ঞ রোধ করা সম্ভব নয়।