২৮ টাকার আলু হাত বদলে যেভাবে ৬০ টাকা হয়ে যাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি,মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: শনিবার ৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫১ অপরাহ্ন
২৮ টাকার আলু হাত বদলে যেভাবে ৬০ টাকা হয়ে যাচ্ছে

মুন্সীগঞ্জ জেলার আলু চাষি ও বাজারে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আলু উৎপাদনের শীর্ষে থাকা এই জেলার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু বিক্রি করে বেশ সীমিত লাভ পাচ্ছেন, অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগীরা একাধিক হাত বদলে আলুর দাম দ্বিগুণ করে ফেলছে। ফলে, কৃষকের ২৮ টাকার আলু এখন খুচরা বাজারে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


মুন্সীগঞ্জে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়ে থাকে। গত মৌসুমে বৃষ্টির কারণে দুই দফায় আলু লাগাতে হয়, যার ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ১৫-১৬ টাকা প্রতি কেজি। কৃষকরা এই আলু পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। এতে ৫০ কেজির একটি বস্তার দাম পড়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা।


কিন্তু এখানেই শেষ নয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা হিমাগার খরচসহ আলুর দাম বাড়িয়ে ৪০ টাকা প্রতি কেজি করেন। হিমাগার থেকে বের করার পর আরও ২ থেকে ৪ টাকা বাড়িয়ে, এক বস্তার দাম ২ হাজার ২০০ টাকায় পৌঁছায়। এরপর পাইকাররা বাজারে এই আলু ২ হাজার ৬০০ টাকা বস্তায় বিক্রি করেন। খুচরা বাজারে এসে আলুর দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত পৌঁছায়, যার ফলে ৫০ কেজির বস্তার দাম ৩ হাজার টাকারও বেশি হয়ে যায়।


ব্যবসায়ীদের বক্তব্য ; সবজি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ইমন জানান, বর্তমানে খুচরা বাজারে আলুর দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, আলুর দাম বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বন্যার কথা উল্লেখ করছে। অপরদিকে, আলু ব্যবসায়ী খোকন পোদ্দার জানান, তিনি ২৮ টাকা কেজি দরে আলু কিনে কিছুদিন পর ১৭শ-১৮শ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। একাধিক হাত বদলে আলুর দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে।


আলু ব্যবসায়ী সমিতির দাবি; মুন্সীগঞ্জ জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাসেদ মোল্লা বলেন, কোল্ড স্টোরেজের খরচের পরও আলুর দাম বাড়ছে এবং ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাজার মনিটরিং করার অনুরোধ জানান, যাতে খুচরা বাজারে দাম কমানো সম্ভব হয়।


হিমাগার ও কৃষি বিভাগের মন্তব্য; মুন্সীগঞ্জ কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার দুলাল চন্দ্র মণ্ডল জানান, প্রতিবার হাত বদলে আলুর দাম বেড়ে যায়। কর্তৃপক্ষের তদারকি করা হলে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, বর্তমানে ৬৪টি হিমাগারের ৫৬টিতে প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং হিমাগার থেকে আলু ৪৫-৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আশা করছেন, মধ্যস্বত্বভোগী ও কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বাজারের অস্থিরতা কমানো সম্ভব হবে।


এই পরিস্থিতি কৃষকদের জন্য কঠিন হলেও, তাদের উৎপাদিত আলু মুনাফার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সবার নজরদারি প্রয়োজন।