প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৫৯
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দিন দিন বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৫ হাজার বস্তায় আদা চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় কৃষকদের বস্তা, বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হচ্ছে, যাতে তারা স্বল্প খরচে আদা চাষ করতে পারে। এ পদ্ধতিতে চাষ হওয়া আদা থেকে ১২ হাজার কেজি উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের ভৈরবগঞ্জ, আশিদ্রোন ইউনিয়নের সুনগইড়, রামনগর, মোহাজিরাবাদ, দিলবরনগর, খলিলপুর ও পারেরটংসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করছেন। কৃষক মুক্তার হোসেন জানান, গত বছর তিনি ১২শ বস্তায় আদা চাষ করে ৭০০ কেজি ফলন পেয়েছিলেন। কৃষি অফিস তার উৎপাদিত আদা থেকে ৩০০ কেজি বীজ সংগ্রহ করেছিল ১৫০ টাকা কেজি দরে, বাকি আদা বাজারে বিক্রি করে তিনি ভালো আয় করেছেন। চলতি বছর তিনি ৫শতাধিক বস্তায় আদা চাষ করেছেন এবং ভালো ফলনের প্রত্যাশা করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, বস্তায় আদা রোপণের উপযুক্ত সময় এপ্রিল-মে (চৈত্র-বৈশাখ) মাস। আদা রোপণের ১৫-২০ দিন আগে বস্তার মাটি প্রস্তুত করতে হয়। এতে উর্বর মাটি, জৈব সার ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। প্রতি বস্তার জন্য ১০-১২ কেজি মাটি, ৫ কেজি গ্যাস মুক্ত গোবর, ২ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট, ১ কেজি ছাই, ২৫ গ্রাম ডিএপি সার, ১০ গ্রাম পটাশ, ৫ গ্রাম বোরন, ৫ গ্রাম জিংক সার ও ১০ গ্রাম দানাদার কীটনাশক প্রয়োজন হয়।
বস্তায় আদা রোপণের সময় প্রতি বস্তায় ৪০-৫০ গ্রাম ওজনের ১-২ টি আদার টুকরো ২-২.৫ ইঞ্চি গভীরতায় রোপণ করতে হয়। রোপণের পূর্বে আদা ৩০-৪০ মিনিট পানির সঙ্গে অটোস্টিন বা প্রোভেক্সে ডুবিয়ে শোধন করা হয়, যাতে বীজবাহিত রোগ ও জীবাণুর আক্রমণ কমে।
আদার গাছের বৃদ্ধি ও ভালো ফলনের জন্য বস্তায় ৫০, ৮০ ও ১১০ দিন বয়সে ২-৩ গ্রাম পটাশ ও ৩-৫ গ্রাম ইউরিয়া সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। মাঝে মাঝে কার্বেনডাজিম ও প্রোপিকোনাজল স্প্রে করে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে বস্তা থেকে আদা সংগ্রহ করা হয়।
বস্তায় আদা চাষে স্বল্প পূঁজিতে ভালো লাভ হওয়ায় কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। চা-বাগানের জন্য পরিচিত এই অঞ্চলে আদার বাণিজ্যিক চাষ নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে এবং কৃষকরা এতে উৎসাহিত হচ্ছে তাদের আয় বাড়াতে এবং স্থানীয় চাহিদা পূরণে।