বাংলাদেশের মানুষ আজ নতুন করে উপলব্ধি করছে—একজন জ্ঞানী, সম্মানিত ও বিশ্বস্বীকৃত রাষ্ট্রনায়কের নেতৃত্ব কেমন হয়, আর রাজনীতিকদের ক্ষমতালিপ্সু নেতৃত্বের মধ্যে পার্থক্য কতটা গভীর।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, শান্তিকামী নেতার মতোই রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবেও ড. মুহাম্মদ ইউনুস সামনে এনেছেন একেবারে নতুন এক বাংলাদেশ—যেখানে রাষ্ট্রচিন্তা কৌশলে ভরা, কূটনীতি সুদূরপ্রসারী এবং রাষ্ট্রের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নিরলস চেষ্টা দৃশ্যমান।
সম্প্রতি ইউরোপ-আমেরিকার রাষ্ট্রপ্রধানদের হাতে ‘জুলাই বিপ্লব’ নিয়ে প্রকাশিত দুর্লভ ছবির বই উপহার দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন—এটা কেবল অতীত স্মরণ নয়, এটি ইতিহাসের দায় স্বীকার এবং ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উপহার দিয়েছেন সেই পুরনো সোনালী স্মৃতি—২০১৫ সালে মোদীর হাত থেকেই প্রাপ্ত নিজের সম্মানসূচক স্বর্ণপদকের ছবির স্মারক। তিনি যেন বিনয়ের সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন—“আপনিই বহু আগে আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।”
দোভাষী ছাড়াই বিশ্বদরবারে একক নেতৃত্ব
সাধারণত রাষ্ট্রপ্রধানেরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে দোভাষীর সাহায্য নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু ১১টি ভাষায় পারদর্শী ড. ইউনুস নিজেই ছিলেন নিজের কণ্ঠস্বর। চাইওয়ালা প্রধানমন্ত্রীকে সামনে রেখে, চায়ের টেবিলের আলাপে উঠে এসেছে বাংলাদেশ-ভারতের বহু অমীমাংসিত ইস্যু—শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, সীমান্ত হত্যা, তিস্তা-গঙ্গার পানি বণ্টনচুক্তি এবং ২০২৪ সালের ‘জুলাই গণহত্যা’ নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট।
তিনি সতর্কভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন—এই রিপোর্ট যদি আন্তর্জাতিক আদালতে গড়ায়, ভারতকেও জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হতে পারে।
রাষ্ট্র পরিচালনার স্টাইলে ড. ইউনুস এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ক্ষমতার কেন্দ্রীভবনের বদলে তিনি গড়ে তুলেছেন বিকেন্দ্রীকৃত সুশাসনের রূপরেখা।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, সরকারি ব্যয়ে স্বচ্ছতা, বাজেটের জনগণের দিকে ঝুঁকে পড়া— সব মিলিয়ে বাংলাদেশ যেন এক নতুন মোড় নিচ্ছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে সরাসরি বাজেট বাড়ানো হয়েছে। ই-ট্রেজারি, ওপেন ডেটা পোর্টাল চালু করে তিনি সরকারি হিসাবনিকাশকে জনদৃষ্টিতে এনেছেন।
‘ইনোভেশন সেল’-এর মাধ্যমে তরুণ বিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা ও শিক্ষার্থীরা এখন রাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে নতুন সমাধান তৈরি করছে—কৃষিতে ড্রোন ব্যবহার, স্বাস্থ্যখাতে এআই প্রযুক্তি, কিংবা শিক্ষা খাতে ব্লকচেইন—সবই বাস্তব রূপ পাচ্ছে।
বিশ্ব এখন বাংলাদেশের পাশে
বিশ্ব যে বাংলাদেশকে একসময় সংকটে ভরা, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অনিশ্চিত মনে করত—আজ সেই বাংলাদেশকে দেখছে স্থিতিশীল, বিশ্বাসযোগ্য ও বিনিয়োগ-উপযোগী একটি রাষ্ট্র হিসেবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ সব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো একের পর এক বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসছে।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নতুন করে কারখানা স্থাপনে আগ্রহী। প্রযুক্তি জায়ান্টরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার হাব বানাতে চাইছে।
চীন এমনকি ড. ইউনুসের জন্য প্রাইভেট বিমান পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিক লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে চিকিৎসা, অবকাঠামো, এডুকেশন-টেক প্রজেক্টে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট: ৭ বছরে যা হয়নি, ৭ মাসে তা সম্ভব
বিশ্ব হতবাক হয়ে দেখছে, যে রোহিঙ্গা সংকটটি গত ৭ বছরেও একটি ধাপও অগ্রসর হয়নি, তা ড. ইউনুস মাত্র ৭ মাসে সমাধানের পথে নিয়ে এসেছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা সফরের মাত্র ৭ সপ্তাহের মাথায় মিয়ানমার সম্মত হয়েছে—প্রথম দফায় ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে। দ্বিতীয় ধাপে ৭০ হাজারের তথ্য যাচাই চলছে। এরপর প্রক্রিয়া শুরু হবে বাকি ৫ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের।
একসময় যাকে এই জাতি অবজ্ঞা করেছে, তার বিরুদ্ধেই রটানো হয়েছে অসত্য, তাকে করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতিয়ার—আজ তাকেই আল্লাহর রহমতে দেখছি রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে, মর্যাদার চূড়ায়।
একজন ইউনুসের হাত ধরে আজ আমরা নতুন করে শিখছি কীভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয়। আন্তর্জাতিক সম্মান কেবল অর্থনীতির মাপকাঠিতে আসে না—এটা আসে নৈতিকতার শক্তি, মানবিক নেতৃত্ব এবং দূরদর্শী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।
আপনি শুধু রাষ্ট্রপ্রধান নন—আপনি এই জাতির আস্থার প্রতীক, আপনি বাংলাদেশের সম্মানের পুনর্জন্ম।