প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ১২:২৬
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ক্রমেই এক সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইসরায়েলের ওপর ইরানের নজিরবিহীন পাল্টা হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাওয়ায় আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং ইরানকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করতে বলেছেন, যা অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধের শঙ্কা আরও ঘনীভূত করেছে।
ইরান এই হুমকি প্রত্যাখ্যান করে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি যুদ্ধে নামে, তবে তার জন্য ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ অপেক্ষা করছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ইরান কোনো অবস্থাতেই আত্মসমর্পণ করবে না এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও সম্মান রক্ষায় সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
এদিকে ছয় দিনের সংঘাতে ইতোমধ্যে উভয়পক্ষ ব্যাপক প্রাণহানি ও অবকাঠামো ধ্বংসের মুখে পড়েছে। ইরানে ইসরায়েলি হামলায় ৫৮৫ জন নিহত ও হাজারের বেশি আহত হয়েছে। পাল্টা হামলায় ইসরায়েলেও প্রাণহানি ঘটেছে। ইরান ‘ফাত্তাহ-১’ নামক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করেছে, যার কিছু ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বাধা পেলেও বেশ কয়েকটি লক্ষ্যভেদ করেছে।
অন্যদিকে ইসরায়েল একাধিক সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করেছে। বিশেষত ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনা তাদের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু। এই ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত বাঙ্কার-ব্রেকার বোমার প্রয়োজন পড়ছে বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইউরোপে তার সামরিক ঘাঁটিতে ৩০টির বেশি ট্যাঙ্কার বিমান মোতায়েন করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা হয়েছে বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিৎজ। এসব পদক্ষেপে ইঙ্গিত মিলছে, যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যদিও এখনো সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি।
তেহরান পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, মার্কিন হস্তক্ষেপ ঘটলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকসহ বিভিন্ন আরব দেশের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালাবে। সেইসঙ্গে হরমুজ প্রণালিতে মাইন পেতে ও হুতি বিদ্রোহীদের মাধ্যমে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার হুমকিও দিয়েছে।
রাশিয়া পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে আলোচনায় মধ্যস্থতার আগ্রহ জানান এবং মস্কো থেকে সতর্কবার্তা দেয়া হয়– ইসরায়েলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দিলে তা পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল করে তুলবে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও সংকট নিরসনে আলোচনা ও সংযমের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তৃতীয় পক্ষের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার হুমকি বিশ্বকে এক বিপজ্জনক মোড়ে এনে দাঁড় করিয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, বিশ্ব এখন ‘বিপর্যয়ের মাত্র কয়েক মিলিমিটার দূরে।’ চলমান সংঘাত থামাতে না পারলে তা পরিণত হতে পারে এক বৈশ্বিক সংকটে, যার প্রভাব পড়বে রাজনীতি, নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিটি স্তরে।
এই উত্তেজনার মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সংঘাত নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। কারণ, এই সংঘাত শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা পৃথিবীর জন্য এক গভীর সংকট ডেকে আনতে পারে।